নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৭জন আক্রান্তের মধ্যে ৪জনের মৃত্যু নিয়ে সর্বাধিক মৃত্যুর শহরে দাঁড়াল খড়গপুর যেখানে প্রায় প্রতি চারজন আক্রান্তের মধ্যে ১জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। খড়গপুর শহরের চতুর্থ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কলকাতার ডিসান হাসপাতালে বুধবার ভোর বেলায় যেখানে হার্টের সমস্যা নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। গত ১২জুন শহরের ২৯নম্বর ওয়ার্ডের গোপালনগরের বাসিন্দা রেলের ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কলকাতার ডিসান হাসপাতালে ভর্তি হন ওই দিনই ৭০বছর বয়স্ক ওই বৃদ্ধের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় ১৩ই জুন পরীক্ষার ফল আসে নেগেটিভ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে ওই সময় ব্যক্তির এমন কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল যে করোনা না থাকা স্বত্ত্বেও তার অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছিলনা। ইতিমধ্যে ফের তাঁর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা শুরু হয়। সন্দেহ হওয়ায় ডাক্তাররা ফের ১৮জুন তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্ৰহ করেন। ১৯ জুন দেখা যায় তিনি কোভিড পজেটিভ। ওই ব্যক্তি তখন গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন। ২০ তারিখ অর্থাৎ শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
রবিবার ডিসানের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হয়। শনিবারের এই মৃত্যুকে ধরলে খড়গপুর শহরে এই নিয়ে মোট চারজনের মৃত্যু হল যাঁদের শরীরে করোনার ভাইরাস পাওয়া গেছিল। শহরের প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২৯মে মেদিনীপুরের গ্লোকাল হাসপাতালে। ৫নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাসিন্দা শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৭তারিখ ভর্তির দুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হওয়া ৪৫ বছরের ওই ব্যক্তির পরে করোনা পজিটিভ ছিল বলে জানা যায়। গোলবাজারের ওই ট্র্যাংক ব্যবসায়ীর নমুনা মৃত্যুর আগেই সংগ্ৰহ করা হয়।
শহরের দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছিল ২৯নম্বর ওয়ার্ডের ঝুলির বাসিন্দা ৬২বছরের অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর। কলকাতার আর.এন.টেগোরে আ্যঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছিল ৪ জুন। অপারেশন হওয়ার আগেই তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন থাকাকালীন গত সপ্তাহে মৃত্যু হয় তাঁর। তৃতীয় মৃত্যু ৫নম্বর ওয়ার্ডের লোহানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ৫৮ বছরের রেলকর্মীর। শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে খড়গপুর রেলের মেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনদিন আগেই। দেড়দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় এই ব্যক্তির এবং তার পরেই জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ।
এই চারটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে অন্য উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এঁদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে অর্থাৎ কোমর্বিডিটি তত্ত্ব অনুযায়ী করোনা এঁদের মৃত্যুর সরাসরি কারন না হলেও এঁদের মৃত্যুকে তরান্বিত করেছে। এঁদের মধ্যে তিনজন ৫৮ থেকে ৭০বছর বয়সী। একজনের ৪৫বছরের। অর্থাৎ বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য করোনা বিপদের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষদের তাই সাবধান হওয়ার দরকার।
এ অবধি এই চারটি মৃত্যু সহ শহরের মোট আক্রান্তের পরিমান ১৭জন। যার মধ্যে ৭জন আর.পি.এফ কর্মী সহ ১০জন সুস্থ। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন করে তরুনী, কিশোর ও প্রৌঢ় রয়েছেন। বাদবাকি যে তিনজন বর্তমান করোনা সক্রিয়রা হলেন, বিদ্যাসাগরপুর, ৫নম্বর ওয়ার্ড ভবানীপুর ও ২৭নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বরঞ্জননগর এলাকার।
মৃত্যুর নিরিখে ঘাটাল, দাসপুর এলাকায় হয়ত খড়গপুরের মতই বা তার চেয়ে এক দুজন বেশি মৃত্যু হয়েছে কিন্তু মনে রাখতে হবে খড়গপুরের তুলনায় ওই এলাকায় আক্রান্তের হার অনেকগুন বেশি। আর সে কারনেই জেলার মধ্যে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় খড়গপুর শহরে মৃত্যুর হার বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।