Homeএখন খবরশুধুই প্রশ্ন, প্রশ্ন আর প্রশ্ন! উত্তর মেলেনি কেন আত্মহননে বলিউডের ' মাহি'

শুধুই প্রশ্ন, প্রশ্ন আর প্রশ্ন! উত্তর মেলেনি কেন আত্মহননে বলিউডের ‘ মাহি’

তিতলী সেনগুপ্ত: সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার পিছনে পর‍তে পরতে রয়েছে রহস্য। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে শ্বাসরোধে মৃত্যু। আত্মহত্যাকেই মান্যতা দিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। কিন্তু কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন সে সম্পর্কে পুলিশ এখনও কিছু কিনারা না করতে পারলেও বেশ কিছু ঘটনা সামনে আসছে যার জেরে অনুমান করা যেতেই পারে যে একটি নয় বরং একাধিক মানসিক চাপেই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলিউডের ‘মাহি’। কি সেই কারণ?

জানা গিয়েছে, সুশান্ত খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। নিজের ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলি নিজের মধ্যে রাখতেই পছন্দ করতেন। বলিউডে তার বন্ধু থাকলেও সে অর্থে কারও সাথেই সেভাবে নিজের ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলতে পছন্দ করতেন না। বেশ কিছুদিন যাবত নিজেকে ঘরবন্দীও করে ফেলেছিলেন সুশান্ত। বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডিপ্রেশনের ওষুধ নেওয়া। ইদানিং নিজেকে সারাদিন বইয়ের মধ্যেই ডুবিয়ে রাখতেন। কারো সাথে কথা বলতে চাইতেন না। সুশান্তের এই অদ্ভুত আচরণ নজর কেড়েছিল তার বাড়িতে থাকা আর্টিস্ট বন্ধুর। সে সুশান্তের দিদিকে ফোন করায় দিদি গোড়েগাঁও থেকে ছুটে এসেছিলেন ভাইয়ের খোঁজ নিতে। সেই সময় সুশান্ত তাকে জানিয়েছিলেন “আমার শরীর ভালো নেই”৷ অর্থাৎ চিরকালের চাপা স্বভাবের সুশান্ত কিন্তু তার দিদিকে কথার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে ‘তিনি ভালো নেই’, কিন্তু দিদি বোঝেননি। তবে, কি কারণে ভালো ছিলেন না সুশান্ত??

এদিকে, মুম্বাই পুলিশ সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তাঁর, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা রয়েছে। এমনকি কোনও লসও নেই অ্যাকাউন্টে সুতরাং আর্থিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েননি। কিন্তু সুশান্তের বাড়ির এক পরিচারকের এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে ছিলেন সুশান্ত। মাস ছয়েক আগেই বান্দ্রার নতুন ফ্ল্যাটে আসেন সুশান্ত। যার ভাড়া প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। এছাড়া চারিদিকে বেশ কিছু ধার দেনাও ছিল। সুশান্তের পরিচারক জানান, দিন দশেক আগে থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কারও সাথে সে ভাবে কথাও বলছিলেন না। যেহেতু বাজারে বেশ কিছু ধার-বাকি থাকায় তাকে সেগুলি মেটাতে হচ্ছিল, তাই এই মুহূর্তে তাঁদের বেতন মেটাতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত। কিন্তু যতদুর জানা যাচ্ছে সুশান্তের ছবি প্রতি আয় ছিল প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা। তার সম্পত্তির পরিমান মোট ৫৯ কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা থাকে তবে পরিচারকদের বেতন দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়বেন কেন?

মৃত্যুর আগে সুশান্ত শেষ ফোনটা করেছিলেন তার বন্ধু মহেশ শেট্টিকে। রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ মহেশকে ফোন করে সুশান্ত৷ কিন্তু কোনো কারণে হয়তো মহেশ ফোনটি সেই সময় ধরতে পারেননি অথবা হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যায় ফোন যায়নি। টেলিভিশনে পা রাখার পর পরই মহেশ শেট্টির সাথে বন্ধুত্ব হয় সুশান্তের। বলিউডে সুশান্ত-মহেশ ভালো বন্ধুর থেকে ভাই বলেই বেশি পরিচিত। পুলিশের তরফে মহেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, বহুদিন থেকেই সুশান্ত হতাশায় ভুগছিলেন। তার যখনই কোনো কারণে মানসিক অবসাদ হতো সব সময় ভাই হয়ে তার পাশে থেকেছে মহেশ। পাশাপাশি, মহেশ শেট্টি পুলিশকে জানিয়েছেন,বেশ কিছুদিন ধরে ডিপ্রেশনের ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুশান্ত। তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “এসবের আর দরকার নেই”৷ একটা মানুষ দীর্ঘ ৬ মাস ওষুধ নিতে নিতে আচমকা বন্ধ করে দিলেন কেন? তাহলে তার জীবনে হঠাৎ এমন কেউ এসেছিলেন বা এমন কোনো ঘটনাকি ঘটেছিল যা তার ডিপ্রেশনকে নির্মূল করে দিতে পারবে বলেই তার মনে হয়েছিল।

সুশান্তের আত্মহত্যার পিছনে কিন্তু আরেকটা কারণ থাকার সম্ভাবনা থাকতেই পারে। সুশান্তের সাথে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডের বিচ্ছেদ দু’বছরের। এই দুই বছরে নিজেদের জীবনে অনেকটাই বদলে গিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত ও অঙ্কিতা লোখান্ড। টেলিভিশনে কাজ করার সময় ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিক থেকে তাদের আলাপ, ধীরে ধীরে প্রেম। তারা কখনোই তাদের সম্পর্কের কথা লুকিয়ে রাখেননি, বরং সামনে এনেছেন। কিন্তু কেন তাদের ‘প্রেম’ ভাঙলো তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। সূত্রের খবর, শীঘ্রই রাইপুরের ব্যবসায়ী বিকাশ জৈনের সাথে বিয়ে করতে চলেছেন অঙ্কিতা। ইতিমধ্যেই সেই তোড়জোড়ও নাকি শুরু করেছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা। এই খবরেই কি মনে মনে ভেঙে গিয়েছিলেন সুশান্তের? এর জন্যই কি এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? এই সন্দেহ কিন্তু কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না। কারণ সেলিব্রিটি হলেও সবার প্রথমে তো সে মানুষ। আর জীবনে প্রেম আসে বহুবার কিন্তু প্রথম প্রেম সারাজীবনের জন্য মনে দাগ কেটে যায়!! ফলে প্রাক্তনের এই সিদ্ধান্তই হয়তো মেনে নিতে পারেনি সুশান্ত।

অন্যদিকে, ইদানিংকালে সুশান্তের নামের সাথে যে নামটা বারংবার জুড়ছে সেই রিয়া চক্রবর্তী, সোমবার এসেছিলেন ‘প্রেমিক’কে শেষবারের মতো দেখতে। সাদা সালোয়ার সাদা মাস্ক, চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সুশান্তের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। জানা গিয়েছে, নভেম্বরেই সুশান্তের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। লকডাউনে সুশান্তের বাড়িতেই ছিলেন বান্ধবী। কয়েকদিন আগেই সে নিজের বাড়ী ফিরে যান। কিন্তু বিশেষ ‘বান্ধবী’-র সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই অশান্তি চলছিল তার, এমনকি সুশান্তের ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন বিশেষ ‘বান্ধবী’। তাহলে কি রিয়া-ই সেই বিশেষ ‘বান্ধবী’ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সুশান্তের? যদি তাই হয় তবে কি কারণে তাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হল? সেই কারণেই কি তবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত? জানা গিয়েছে, মহেশ শেট্টি সুশান্ত ও তার বান্ধবী দুজনেরই ‘কমন’ ফ্রেন্ড ছিলেন। তবে বান্ধবী ফোন না ধরায় তাঁর খোঁজ নিতেই শেষবারের মতো মহেশকে ফোন করেছিলেন সুশান্ত?

৭ দিন আগেই সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান মুম্বাইয়ের মালাডের একটি বহুতলের ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। ম্যানেজার ছাড়াও দিশা ও সুশান্ত বেশ ভালো বন্ধু ছিলেন। অনেক ভালো-খারাপ সময় পাশে থেকেছেন দুজন-দুজনের। এমনিতেই কয়েকমাস যাবত ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন সুশান্ত তার ওপর আচমকা ম্যানেজার তথা ভালো বন্ধু দিশা সালিয়ানের মৃত্যু কি তবে নাড়িয়ে দিয়েছিল সুশান্তকে? তাই কি তিনি দিশার দেখানো পথেই মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন?? দিশার মৃত্যুর ৭ দিনের মধ্যেই সুশান্তের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কিন্তু সেই ইঙ্গিতই করছে।

৩৪ বছরের এই সদ্য প্রতিষ্ঠিত অভিনেতার এভাবে আচমকা আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার, মেনে নিতে চাইছে না দেশবাসী। কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন? সেই সময় তার মানসিক অবসাদ কতটা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন?? অনেক প্রশ্নই দানা বাঁধছে। ধীরে ধীরে সব রহস্যের অবসানও হবে একদিন, কিন্তু মানুষটাই আর ফিরে আসবেনা। সুশান্ত চলে গেলেন আর দেশবাসীর জন্য রেখে গেলেন তাঁর জীবনের বহু ‘ আনটোল্ড স্টোরি।’

RELATED ARTICLES

Most Popular