নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে কাজকম্ম চৌপাট হয়ে গেছে ৫০দিনেরও বেশী উপার্জন, আয়ের খরা কাটিয়ে যখন সবে বাজার খুলেছে, যখন হামারে জমানো কয়েক মুঠো ধান বিক্রি করার সুযোগ এসেছে কিংবা বনে বাদাড়ে কিংবা মাঠে ঘাটে গায়ে গতরে খেটে দু’পয়সা আয়ের সুযোগ এসেছে তখন হাতি আর বাঘের আতঙ্কে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় জঙ্গলবাসীর।
রবিবার প্রায় মধ্যরাতে মেদিনীপুর বনবিভাগের নয়াবসত রেঞ্জের অন্তর্গত গোয়ালতোড়ের গোহালডাঙ্গা গ্রামে খাবারের সন্ধানে হানা দেয় হাতি। গ্রামেরই বাসিন্দা মদন গিরির কাঁচা বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে বাড়ি থেকে ধান বের করে খায় এবং যাওয়ার সময় দু বস্তা ধান শুঁড়ে প্যাঁচিয়ে নিয়েও যায়৷ নিজেদের আস্তানায় ফিরে যাওয়ার পথে চরণ মুর্মু নামে আরেক গ্রামবাসীর বাড়িতেও হানা দেয়৷ হাতির হামলায় তার বাড়িরও কিছুটা অংশ ভেঙ্গে পড়ে। তবে ঘটনায় কেও হতাহত হয়নি।
হাতির হানায় ভেঙ্গে পড়া বাড়ির মালিক চরণ মুর্মু বলেন, অনেক কষ্ট করে ঘর টি বানিয়ে ছিলাম৷ এইভাবে হাতিতে ভেঙ্গে দেবে ভাবতেও পারছি না৷ প্রশাসনিক ভাবে বাড়ি মেরামত না করে দিলে সমস্যায় পড়বো।অবশ্য শুধু চরন মুর্মু বা মদন গিরি নয় গ্রামের অনেকেই জানিয়েছেন হাতি বাড়ি ভেঙ্গে ধান বের করে খাচ্ছে। গ্রামের প্রায় বেশীর ভাগ মানুষেই চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত৷ আর প্রত্যেকের বাড়িতেই কমবেশী ধান রয়েছে। লকডাউনের বাজারে এই সঞ্চিত ধানই তাদের একমাত্র সম্বল। এই ভাবে যদি ঘর ভেঙ্গে ধান খেতে আসে তাহলেই বিপদ। যে কোনো সময় বড়ো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে৷ বনদপ্তরের উচিত অবিলম্বে হাতি গুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
গোয়ালতোড়ের গোহালডাঙ্গায় যখন হাতির হামলা তখন পশ্চিম মেদিনীপুরেরই শালবনী থানার তিলাবনী গ্রামের মানুষ সোমবার সকালে বাঘের আতঙ্কে কাঁটা। বৃষ্টি হয়ে যাওয়া ভেজা রাস্তার ওপর সেই ‘অজানা’ জন্তুর পায়ের ছাপ দেখে শোরগোল পড়ে যায় গ্রামে। গ্রামের লোকেরা তো বটেই আশেপাশের গ্রামের লোকেরাও ভিড় জমায় সেই পায়ের ছাপ দেখে। বছর দু’এক আগে পাশের থানা লালগড় আর গুরগুড়িপাল দাপিয়ে বেড়িয়েছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ তাই সিঁদুরে মেঘের মত আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামে।
খবর পেয়ে ছুটে যান পিড়াকাটা বন রেঞ্জের বন আধিকারিকরা। ছাপের আকার আকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তারাই জানিয়ে দেন বাঘ নয়, এখানকার জঙ্গলের স্বভাব বাসিন্দা হুড়ার বা ইন্ডিয়ান গ্রে উলফ-এরই পায়ের ছাপ ওটি। যদিও এটিও কম আতঙ্কের নয়, সংখ্যায় বেশি হলে এরাই অবলীলায় গোয়াল থেকে হাপিস করে দিতে পারে আস্ত বাছুর কিংবা ছাগল ভেড়ার পাল। গত কয়েক বছর ধরে এদেরই দাপট দেখেছে পাশের জেলা ঝাড়গ্রামের জামবনী, সাঁকরাইল।