ওয়েব ডেস্ক : আমফানে উড়ে গিয়েছে কারও বাড়ির চাল, কারও ভেঙে পড়েছে বাড়ি, কারও আবার যেটুকু সহায় সম্পত্তি ছিল সেটুকুও ডুবে গিয়েছে জলে। এই পরিস্থিতিতে বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো সেই একইভাবে দুর্নীতির স্বীকার হচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ক্ষতিপূরণের টাকা তো পাচ্ছেনই না বরং সেই টাকা চলে যাচ্ছে শাসক দলের কোনো নেতা কিংবা তার আত্মীয়ের পকেটে। কোনও কোনও জায়গায় দেখা যাচ্ছে ঝাঁ-চকচকে পাকা বাড়ি, ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নমাত্র নেই, কিন্তু স্বামী পঞ্চায়েত প্রধান তাই স্ত্রীও ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকছে গোটা রাজ্য। বাদ পড়েনি উত্তর ২৪ পরগণার দাদপুরও। সেখানেও একই ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,আমফানের জেরে আসলে যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে তারা সরকারের তরফে কোনোরকম ক্ষতিপূরণ পাননি। কিন্তু এদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকে গিয়েছে দাদপুর পঞ্চায়েতের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর আত্মীয়ের অ্যাকাউন্টে। এই ঘটনায় প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসের আলির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসের আলি পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি যথেষ্ট স্বচ্ছল মানুষ। তার পাকা দু’তলা বাড়ি। অথচ ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য আবেদন করেছেন। এমনকি সেই টাকা পেয়েও গিয়েছেন তিনি। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত,যারা মাথার ছাদটুকুও হারিয়েছেন তারা এখনো পর্যন্ত কোনোরকম সরকারি সাহায্য পাননি। এর জেরে শাসনের দাদপুরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনায় স্থানীয়দের তরফে তৃণমূলের ওই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসের আলির বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তবে এই অভিযোগ একেবারেই অস্বীকার করেছন আসের আলি। তিনি বলেন, “আমফানে আমার বাড়ির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ নিয়েছি।” তিনি জানান, “অনেক পরিবার আছেন যারা ক্ষতিগ্রস্ত,কিন্তু তাদের দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সমস্যা রয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই সকলের কাছে তাদের প্রাপ্য টাকা পৌঁছে যাবে।”
এর আগে রাজ্যে যতবারই সাধারণ মানুষের কোনো সরকারী অর্থ বা সুযোগসুবিধা পাওয়ার কথা ছিল প্রত্যেকবারই আদতে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের বদলে শাসকদলের নেতাকর্মীদের পকেট ভরে। এর আগে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গরীব মানুষের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমফানের মতো এমন বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে যখন সর্বস্ব হারানো মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়ানোর কথা সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা হাতানোর অভিযোগ যে স্বাভাবিকভাবেই শাসকদলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।