নিজস্ব সংবাদদাতা: “সারা দেশের কয়েক কোটি মানুষ আয়ুস যোজনায় বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন ব্যতিক্রম খালি বাংলা কারন নরেন্দ্র মোদী বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে যাবেন, ভারতের সমস্ত গরিব কৃষকরা তাঁদের আ্যকাউন্টে ৬ হাজার করে পেয়েছেন কিন্তু বাংলার একজনও কৃষক সেই টাকা পাননি কারন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কোনও তালিকা পাঠাননি। আমি এখনও বলছি আপনি আজ তালিকা পাঠান আমরা কালই বাংলার কৃষকরা তাঁদের আ্যকাউন্টে টাকা পেয়ে যাবেন।” পশ্চিমবঙ্গের জনতার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দিল্লি থেকে অনলাইনে ভাষণ দিতে গিয়ে এভাবেই ২০২১ য়ের বিধানসভার দামামা বাজিয়ে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মমতা ব্যানার্জী ইদানিং বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হচ্ছেন। আসন্ন বিধানসভায় মমতা ব্যানার্জী এবং তাঁর তৃনমূল এটা নিয়েই প্রচারে সামিল হবেন ধরে নিয়েই বলেছেন, ”আমফানে বিধ্বস্ত বাংলা নিয়ে দিদি যখন চিন্তায় পড়েছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আপনি কেন এত চিন্তা করছেন, বাংলাতো আমাদেরও। আপনি তালিকা পাঠান, আমরা টাকা দেব। দিদি শুক্রবার তালিকা পাঠিয়েছেন আর বাংলার আ্যকাউন্টে সোমবারই টাকা ঢুকে গেছে।”
ভার্চুয়াল এই সভার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জনসংবাদ র্যালি’।
অমিত শাহ এদিন শুরুতেই ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে কারন করোনা আর লকডাউনের বাজারেও জনগনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার এই ঘরে বসেই দলে দলে যোগদান করার প্রযুক্তি তাঁরই মস্তিস্ক প্রসূত বলে তিনি জানিয়েছেন। বিজেপির আইটি সেলের দক্ষতায় এই উপলক্ষ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে রাজ্যের দু’ হাজার নেতাকর্মীকে যুক্ত করা হয়েছিল বলে বিজেপি জানিয়েছে। রাজ্যে ৭০হাজার জয়েন্ট স্ক্রিনের টিভির মাধ্যমে কয়েক লক্ষ সভ্য সমর্থকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে শাহের বক্তব্য। বিভিন্ন জায়গায়, দলীয় কার্যালয়ে রাজ্য নেতৃত্ব-সহ রাঢ় বঙ্গের অধিকাংশ বিজেপি নেতা-কর্মীও। পাশাপাশি বিজেপির অন্যান্য জেলা সভাপতি, মণ্ডল সভাপতিরাও অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন এই জনসভায়।
বিজেপির উদ্দেশ্য, সামাজিক দূরত্ব মেনে বিভিন্ন পার্টি অফিস-সহ অন্যান্য জায়গায় ফেসবুক লাইভ করা। এ ভাবে প্রায় দু’লক্ষ মানুষকে যোগদান করানো সম্ভব হবে বলে আশা বিজেপি নেতৃত্বর। এর আগে, রবিবার বিহারে ‘জনসংবাদ র্যালি’-র ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন অমিত শাহ। তার পর দিন অর্থাৎ সোমবার, একইভাবে ওড়িশা ‘জনসংবাদ র্যালি’-তেও বক্তৃতা করেন তিনি। মহারাষ্ট্রে ‘জনসংবাদ র্যালি’ করেন রাজনাথ সিংহ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে লকডাউনের আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সামনে রেখে এ রাজ্যে লাগাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে গিয়েছে বিজেপি। কিন্তু দেশ জুড়ে দীর্ঘ লকডাউন চলাকালীন পরিস্থিতির দিকেই নজর রেখেই তা সম্ভবপর হয়নি। তবে এখনও লকডাউন চলছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিও এর সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এই ভার্চুয়্যাল র্যালির আয়োজন করা হয়েছিল যা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছে বিজেপির আইটি সেলের সদস্যরা।
এই ভার্চুয়াল সভার ঠিক আগেই লাদাখ সীমান্তে চিনা আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলে অমিত শাহকে প্রশ্ন করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে টুইটে খোঁচা দিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। তবে সরাসরি সেই জবাবে না গিয়েই শাহ জানিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত প্রশ্নে কোনও আপস করেননি মোদি। বরং প্রতিটি আঘাতের প্রত্যঘাত করে মোদি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ভারতীয় সেনার প্রান সস্তার নয়। উল্টে শাহ এদিন ফের জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার মত রাজনৈতিক হিংসা আর কোনও রাজ্যে হয়না।
এবছর বিজেপি কলকাতার লাগোয়া বনগাঁ লোকসভার দখল পেয়েছে। মতুয়া সমাজ অধ্যুষিত বনগাঁ তৃণমূলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই মতুয়া সমর্থনকে আরও সংবদ্ধ করার লক্ষ্যে অমিত শাহ মতুয়াদের প্রতি অন্যায় করেছেন বলে জানিয়ে বলেছেন, “মাতুয়ারা, নমঃশূদ্ররা, বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেলে আপনার কোথায় অসুবিধা দিদি? কেন আপনি এনআরসির বিরোধিতা করে ওঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথে টাং আড়াচ্ছেন(ল্যাং মারছেন)?” উল্লেখ্য বাংলার মানুষদের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পথে মমতা ব্যানার্জীর এই টাং আড়ানোর কথা অমিত বারবার বলেছেন। আয়ুস স্বাস্থ্য যোজনা বা কৃষক যোজনাতেও যে মমতা ব্যানার্জী টাং আড়াচ্ছেন এটা উল্লেখ করে শাহ বলেছেন, ” বিজেপি বাংলায় ক্ষমতা পাওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প চালু হয়ে যাবে।’
অমিত শাহ ফের এদিন বাংলার মানুষের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলার মত এত রাজনৈতিক হিংসা আর কোনও রাজ্যে হয়না। তিনি এও জানিয়ে দেন যে বিজেপি গনতান্ত্রিক পথেই উন্নয়ন করছে এবং সেই পথেই আপনাদের সোনার বাংলা গড়ব।
তবে এদিনের সভায় সব কিছুকেই এদিন ছাপিয়ে গেছে মুকুল রায়ের উপস্থিতি। গতকালই মুকুল রায়কে দিল্লি উড়িয়ে নেওয়া যাওয়া হয় এই সভার উপলক্ষ্যেই। সভায় দিলীপ ঘোষ বা বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরীরা উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ছিলেন রাজ্য সভাপতি বা রাজ্য থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেই। কিন্তু বিজেপির কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকা স্বত্তেও যেভাবে মুকুলকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এই সভার মুখবন্ধ তাঁকে দিয়েই করানো হয়েছে তাতে বোঝা গেছে ২০২১ য়ের আগে নিজেদের অস্তিন থেকে টেক্কাটি এবার বের করল বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি। আর আসন্ন বিধানসভায় মুকুলই যে দিল্লির তরফেই প্রধান সেনাপতি সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হল আজ।