নিজস্ব সংবাদদাতা: “সবাই যদি জামাই আদর পেতে চায় তাহলে তো খুবই মুশকিল! আপনার বাড়িতে একজন এলে যেমন খাতির করতে পারবেন, অনেকে এলে তেমনটা পারবেন?” কাজ হারানোর যন্ত্রনা, উপার্জন হীনতার কষ্ট আর বাড়ি ফিরেও বাড়ি না ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার সমস্যা কাতর পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য এমনই বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। যিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে এক জনসভায় বলেছিলেন যে তাঁকে যে টিকিট কেটে দেখতে হয়না এটাই নাকি তাঁর ভোটারদের বড় পাওনা। সে নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে এ হেন বক্তব্য বিতর্ক তৈরি করল ফের।
কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিতে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ রয়েছে। কোথাও জল নেই, কোথাও খাবার পাচ্ছেন না ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকরা। কোথাও সামাজিক দূরত্বকে শিকেয় তুলে বহু লোককে রাখা হয়েছে একসঙ্গে। এমনকি বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী তাঁর জেলার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলিকে খোয়াড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এসব নিয়ে সাংসদরা নিজের নিজের এলাকায় গিয়ে সরে জমিনে খতিয়ে দেখবেন এমনটাই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন। আর সে কারনেই কলকাতা থেকে ছুটেছিলেন সচরাচর নিজের কেন্দ্রে খুবই কম যাওয়া অভিনেত্রী সাংসদ।
শনিবার সাঁইথিয়ায় পৌঁছে বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ঘুরে দেখতে বের হন সাংসদ। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শতাব্দী বলেন, “সবাই যদি জামাই আদর চান সেটা দেওয়াটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে! মাছ দিলে বলছে মাংস দেয়নি, মাংস দিলে বলছে ডিম দেয়নি!” এখানেই থামেননি তিনবারের সাংসদ। তিনি বলেন, “আপনার বাড়িতে একজন এলে যে যত্নটা করতে পারবেন এক হাজার লোক এলে সেটা পারবেন না। এত হাজার হাজার মানুষ আসছেন। তাঁরা বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির। এটা একটু হবেই!”
বিষয়টিকে লুফে নিয়েছে বিজেপি, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু শতাব্দীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছেন, “তৃণমূল দলটা যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কুকুর-ছাগল ভাবে তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছে। প্রথমে রাজ্যে ফেরাতেই চাইছিল না। এখন চাপে পড়ে ফেরালেও তাঁদের ন্যূনতম খাবার, জল সরকার দিতে পারছে না।”
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী বলেন, “কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কেউ জমাই আদর চাইছেন না। দু’বেলা দু’মুঠো পেট ভরার মতো ডাল-ভাত চাইছেন। সেটাও সরকার দিচ্ছে না। এটা কি দাস ব্যবস্থা চলছে নাকি?” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সরকার। আর বিডিওরা বলছেন কোনও টাকা আসছে না। শাসকদল পুরো টাকা লুঠ করে নিচ্ছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও। তিনি বলেন, “ভোটের আগে এই গরিব মানুষগুলোই ওঁর কাছে ‘জামাই’ ছিলেন। আর যেই ভোটে জেতা হয়ে গিয়েছে তখন দারিদ্র নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন ভিন রাজ্য থেকে ফেরা সবাইকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখার পরিকাঠামো সরকারের নেই। সংক্রমণের শীর্ষে থাকা পাঁচটি রাজ্য মহারাষ্ট্র, গুজরাত, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকে ফিরলেই কেবল সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। বাকিদের থাকতে হবে হোম কোয়ারেন্টাইনে।কিন্তু যাঁদেরকে রাখা হচ্ছে তাঁদের দাবি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে খাবার, জল নেই, সাপ ঢুকে পড়ছে। ক্ষোভে চলেছে বিক্ষোভ এমনকি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে খোলা মাঠে ছাউনি করে থাকতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের শান্ত করার পরিবর্তে তাঁদের উদ্দেশ্যে সাংসদের এই মন্তব্য ফের তাঁর রুচি আর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিল।