নিজস্ব সংবাদদাতা: সরকার চেষ্টা করছে হয়ত কিন্তু পাল্টেছে কী সিস্টেম? মনে হয় তো না। না’হলে একজন আসন্ন প্রসবাকে বা সদ্য প্রসূতিকে ফেরায় হাসপাতাল? কোথায় গেল নিশ্চয় যান বা মাতৃযান পরিষেবা? সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা চোখে পড়ল সংবাদমাধ্যমের। প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন মা কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের হেল্পলাইনে বারে বারে ফোন করেও আসেনি মাতৃযান। এদিকে আসন্ন প্রসবার জল ভাঙতে শুরু করেছে। অগত্যা স্থানীয় একটি টোটোতেই ওই প্রসূতিকে নিয়ে দীর্ঘ রাস্তা টোটোতে করেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। এদিকে পথেই প্রসব বেদনা তীব্রতর হয়ে ওঠে। দু’জন সঙ্গী আর টোটোচালক এবার অসহায় হয়ে পড়েন। প্রসূতি তখন মারাত্মক যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। বিষয়টি নজরে পড়ে কয়েকজন স্থানীয় মহিলার। তাঁরাই আসন্নপ্রসবাকে নিয়ে রাস্তার পাশে একটি গোয়াল ঘরে নিয়ে যান। খড় বিছিয়ে মাকে শুইয়ে সন্তান প্রসব করানো হয়। বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ এলাকার ঘটনা।
জানা গেছে গোসাবার পূর্ব রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মিতা খন্ডিত শনিবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে ছোট মোল্লাখালি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। কিন্তু তাঁর রক্তচাপ বেশি থাকার কারণে চিকিৎসকরা সেখানে প্রসব করানোর ঝুঁকি নিতে পারেননি। তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দীর্ঘ নদীপথ পেরিয়ে আসন্নপ্ৰসবাকে নিয়ে ক্যানিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। পথে আসার সময় বারে বারে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার ১০২ নম্বরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোন অ্যাম্বুলেন্স পাননি তাঁরা। চুনাখালি নদী ঘাট থেকে ক্যানিং হাসপাতালের উদ্দেশ্যে টোটোয় করে রওনা দেন তাঁরা। পথে ফুলমালঞ্চের কাছে প্রসব বেদনা উঠলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিতা। পরে ওই ঘটনা।
গ্রাম্য মহিলারা প্রসব করাতে সমর্থ হলেও নাড়ি কাটতে পারেননি। তাঁরা পরামর্শ দেন নাড়ি কাটতে এই অবস্থাতেই নিয়ে যাওয়া হোক সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এবার টোটোয় যাওয়া মুশকিল। নাড়ি না কাটায় সন্তান মা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়নি। তখনও আসেনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে ক্যানিং হাসপাতালে আসেন।
এখানে শুরু আরেক দুর্ভোগ। হাসপাতালে এলে কর্তব্যরত নার্সরা তাঁদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। কেন মা ও সন্তানকে এভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে সে বিষয়েও রোগীর পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তাঁরা। তাঁদেরকে কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি। কাটা হয়নি নাড়িও। আর হাসপাতালের বাইরে প্রসব হওয়ায় সেখান থেকে সদ্যজাতের জন্ম সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন কর্তব্যরত নার্সরা। অগত্যা সরকারি হাসপাতাল থেকে সঠিক পরিষেবা না পেয়ে ফের সেই ২০ কিলোমিটার দূরে চুনাখালিতে এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে মা ও শিশুটির নাড়ি কাটার ব্যবস্থা করেন পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন মা ও সন্তান। ছবি:সংগৃহিত