Homeএখন খবরকাটমানির জনরোষে কেশপুর, তালা পড়ল তৃণমূল পার্টি অফিসে

কাটমানির জনরোষে কেশপুর, তালা পড়ল তৃণমূল পার্টি অফিসে

নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা আর লকডাউন, এরপরে আমফান, ত্রান নিয়ে শাসক বিরোধী ক্ষোভ উপচে পড়তে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আর তার মধ্যেই ফের মাথা চাড়া দিল ‘কাটমানি’র ভূত। সেই কাটমানি বিরোধী জনরোষ এতটাই তীব্র হল যে তালা পড়ে গেল কেশপুরে। সেই কেশপুর, যাকে নাকি তৃণমূল প্রায় কন্ট্রোলে নিয়ে চলে এসেছে বলে দাবি করেছিল। শনিবার দুপুরে প্রায় তিন’শ মানুষ যার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি একজোট হয়ে তৃনমূলের পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। এঁদের দাবি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১০ থেকে ২২হাজার টাকা অবধি কাটমানি নিয়েছে তৃনমূলের নেতারা।

কেশপুরের আনন্দপুর থানা এলাকার শোলাডিহা তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ওই মহিলা পুরুষরা দাবি করেন ,দূর্নীতি বাজ তৃনমুল নেতাদের শাস্তি সহ গরীব মানুষের একশ দিনের কাজের টাকা, গৃহ আবাস যোজনার কাট মানি ফেরত দিতে হবে। বিক্ষোভকারীদের দাবি
একশ দিনের কাজ শুরু হলেও সবাই কে সেই কাজ না দিয়ে গুটি কয়েক বুথের মানুষ আর বাইরের লোক জন নিয়ে এসে শুরু করে তৃনমুল।
দাবি করা হয় ৯ হাজার শ্রম দিবসের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে। কাজ করেনি এমন মানুষদের ব্যাঙ্ক তহবিলে টাকা ঢুকিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন তৃনমূলের কয়েকজন নেতা। বিক্ষোভকারীদের আরো দাবি তাঁদের জবকার্ড রেখে দেয় তৃণমূলের নেতারাই। জব কার্ড ফেরত সহ সে কাজ দেওয়ার নাম করে যে পরিমান টাকা নিয়েছে তা ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা এদিন একটি তালিকা নিয়ে যায় যেখানে কোন নেতা কার কার কাছ থেকে কত টাকা কাটমানি নিয়েছেন তা লেখা রয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি ৪২ টি পরিবারের কাজ থেকে ১০ থেকে ২২ হাজার টাকা অবধি নেওয়া হয়েছে ঘর তৈরির টাকা দেবে বলে। কিন্তু মাত্র ২৯ টি ঘর হয়েছে। দারু সিং বলে এক জনের পুরো ঘরের টাকা নিয়ে নিয়েছে তৃনমূলের গৌতম মল্লিক। নিমাই রুইদাস দাবি করেন তার পরিবারের কাছে ঘর বাবদ ২২ হাজার আর তিন জনের জব কার্ড বাবদ ১০ হাজার নিয়েছে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শ্রাবন্তী নন্দীর স্বামী ন্যাড়া নন্দী। এই ন্যাড়া হলো অঞ্চল সভাপতির অজিত নন্দীর ভাইপো। জনতা আরও দাবি করে কাটমানির আস্তানা এই পার্টি অফিস বন্ধ করে দিতে হবে। জনতার চাপের মুখে স্থানীয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা গৌতম মল্লিক দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়।

গৌতম মল্লিক স্বীকার করে নেন যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অঞ্চল নেতৃত্ব ১০হাজার করে টাকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে কারও কারও কাছ থেকে ২০হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। যদিও কেশপুর ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাটি দাবি করেন, ভয় পেয়েই গৌতম ওসব বলেছে। তাঁদের দল কোনও টাকা নেয়নি। এর পেছনে বিজেপির চক্রান্ত রয়েছে। অভিযুক্ত আরেক তৃণমূল নেতা অজিত নন্দীর দাবি তিনি কোনও টাকাই নেননি, সবই বিজেপির চক্রান্ত। বিজেপির আক্রমনের মুখে তিনি অনেকদিন ঘর ছাড়া হয়েছিলেন লোকসভার পরে।

হয়ত তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ মত ঘটনার পেছনে বিজেপি নেতারা রয়েছেন কিন্তু যে তফসিলি জাতি বা উপজাতির মহিলারা, যে বৃদ্ধ, প্রৌঢ় মানুষের দল আজ তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁদের মুখ বলেছে তাঁরা মিথ্যা বলছেননা। এই মানুষের দলকে নিয়েই কিন্তু ৯বছর আগে তৃণমূল আনন্দপুরের সিপিএমের পার্টি অফিসের দখল নিয়েছিল। ইতিহাসের আশ্চর্য গতি যে ৯ বছর সময় নিলনা যে তৃণমূল নেতারা নিজেরাই স্বীকার করছেন যে তাঁরা ঘরে থাকতে পারছেন না! পরে অবশ্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে ফের অফিস খুলেছেন তৃণমূল নেতারা।

RELATED ARTICLES

Most Popular