নরেশ জানা : লকডাউনেই থাকছে আইআইটি খড়গপুর। শিথিল করা হচ্ছেনা কোনও বিধি নিষেধই। আইআইটি খড়গপুর ডিরেক্টর ফেসবুক পেজে এমনটাই জানিয়েছেন আইআইটির বর্তমান নির্দেশক অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারী। উল্লেখ্য আগামী ৮জুন থেকে আনলক ইন্ডিয়া ফেজ ওয়ান শুরু হচ্ছে যার অর্থ লকডাউনের বিধি নিষেধের কিছু অংশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এই পর্বে দোকানপাট,হোটেল রেস্তোরাঁ, শপিং মল, কল কারখানা, ধর্মীয় স্থান খুলে যাচ্ছে কিছু নিয়ম মেনে। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি খোলার কথা এই নির্দেশিকায় বলা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে কেন্দ্র সরকার যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির ওপর থেকে বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করেনি তখন আইআইটি খড়গপুরের লকডাউন বজায় রাখার মধ্যে কী নতুনত্ব রয়েছে?
।আসলে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে আইআইটি খড়গপুরের পার্থক্য হল এই যে এটি শুধুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, প্রায় সাড়ে ছ’হাজার বিঘা জায়গা জুড়ে ৯ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী এই ক্যাম্পাস একটি ছোট খাটো শহর বা উপনগরী যার ভেতরে পড়ুয়াদের জন্য আলাদা করে শিক্ষা ক্যাম্পাস ছাড়াও রয়েছে একটি বড় বাজার ছাড়াও ডজন খানেক রেস্তোরাঁ, কাফেটোরিয়া, সুইমিংপুল, দুটি বড় স্টেডিয়াম, টেনিসকোর্ট, জিমখানা, ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা। পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন চালু প্রজেক্ট। আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে প্রায় সাড়ে চারশ অধ্যাপক অধ্যাপিকা ও প্রায় হাজার আশিক্ষক কর্মচারী ও অন্যান্য কর্মী ও তাঁদের পরিবার রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই আইআইটি নিছকই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় তার বাইরে গিয়েও এর বৃহত্তম জন জীবন রয়েছে।
জরুরী প্রয়োজন ও পরিষেবা ব্যতিরেকে এর পুরোটাই সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায় থাকছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক তেওয়ারী।
তেওয়ারী ডিরেক্টর ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন, লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ার আগেই ছাত্রদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া স্বত্তেও প্রায় ৪ হাজার পড়ুয়া ক্যাম্পাসে থেকে গেছে। এরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের বিশ্বাস করেছে। এছাড়াও রয়েছেন আমাদের এক হাজার কর্মী বন্ধু। এই বৃহত্তর জনসমাজের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়েই আইআইটি ক্যাম্পাসে লকডাউন বলবৎ রাখা হচ্ছে এবং আমাদের কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় তার একটি নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে যা ১ জুন থেকে শুরু হয়ে আগামী কোনও নির্দেশিকা না আসা অবধি বলবৎ থাকবে।
ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আগের মতই ক্যাম্পাসের চারটি ফটকের পরিবর্তে কেবল একটি ফটক খোলা থাকবে। এই ফটক দিয়ে আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রন করা হবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে গৃহ পরিচারিকা বা পরিচারকদের এখুনি বহাল করা যাবেনা। আইআইটির আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসটি পুরোপুরি বন্ধই থাকবে। আইআইটির শিক্ষক কর্মীরা প্রয়োজনে ছুটি নিয়ে নিতে পারেন অথবা বাড়িতে বসেই কাজ করতে পারেন। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীরা যাঁরা ক্যাম্পাসের বাইরে আছেন তাঁরা বাইরেই থাকুন এখন ক্যাম্পাসে ফিরবেননা। ক্যাম্পাস থেকে কেউ বাইরে যাবেননা যদি ক্যাম্পাস ছাড়তে চান ছাড়তে পারেন কিন্তু প্রবেশ করতে পারবেননা। একমাত্র পেট্রোল ডিজেল ইত্যাদির প্রয়োজনে পাম্পে যাওয়ার জন্য বেলা ২টা থেকে ৪টা অবধি ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারেন। বয়স্ক নাগরিকদের বাড়ির বাইরে না বেরুনোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ব্যতিক্রমমের মধ্যে আইআইটি টেক মার্কেট বা মূল বাজারটি বেলা ২ টা অবধি খোলা থাকবে। জরুরি পরিষেবা চালুর কর্মীরা কাজ করবেন। যদি কোনও প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে কোনও কর্মী ও শিক্ষক ফিরতে চান তবে সেই প্রয়োজন খতিয়ে দেখার পরই কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁকে ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হবে কী না। আর মাস্ক পরা প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক ও বাজারের কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব মানতে বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাস পুরোপুরি থেকে যাচ্ছে কঠোর লকডাউন পর্বের মতই। আইআইটি ডিরেক্টরের কথায়, প্রতিষ্ঠানের সমস্ত মানুষের কথা ভেবেই এই জরুরী নিয়মগুলো আমাদের সবাইকেই মেনে চলতে হবে যা আমাদের সবাইকেই সুস্থ ও নিরাপদ রাখবে।