Homeএখন খবরবিজেপি সমর্থক হওয়ার অপরাধে ঢোল পিটিয়ে সামাজিক বয়কট করার অভিযোগ পরিবারকে, গ্রাম্য...

বিজেপি সমর্থক হওয়ার অপরাধে ঢোল পিটিয়ে সামাজিক বয়কট করার অভিযোগ পরিবারকে, গ্রাম্য ব্যাপার দাবি তৃণমূলের

নিজস্ব সংবাদদাতা: রীতিমত পেশাদার ঘোষক দিয়ে ঢোল পিটিয়ে একটি পরিবারকে সামাজিক বয়কটের ডাক দেওয়া হল গ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সামাজিক বয়কটের মত ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানা এলাকার একটি গ্রামে। ঢোল পিটিয়ে ঘোষককে বলতে শোনা গেছে, “এতদ্বারা ঘনরামপুর ও শ্রীমন্তকোলা গ্রামের সমস্ত গ্রামবাসীকে জানানো যাইতেছে যে, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী গ্রাম কমিটির নামে নিন্দনীয় কুৎসা ও অপপ্রচার করার জন্য, গ্রামবাসীদের অসম্মান ও গ্রামের কাজে অসহযোগিতা করার জন্য ১০ই জৈষ্ঠ রবিবার গ্রামসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুভ্রাংশু চক্রবর্তীকে গ্রামের পক্ষ থেকে সার্বিক ভাবে অসযোগিতা করা হবে।”

কিভাবে অসহযোগিতা করা হবে তাও বলছেন ঘোষক। বলছেন,  “যেমন কৃষি ক্ষেত্রে চাষআবাদ, হাটবাজার-দোকানপাট, পূজার্চনার ক্ষেত্রেও সার্বিক ভাবে অসহযোগিতা করা হবে। যদি কোন গ্রামবাসী শুভ্রাংশু চক্রবর্তীকে কোনরকম সহযোগিতা করেন, গ্রামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ব্যক্তিও সমান দোষে দোষী হবেন। ধন্যবাদান্তে গ্রাম সম্পাদক গৌতম হালদার।”
যে গ্রামের কথা বলা হচ্ছে সেই চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের চন্দ্রকোনার ঘনরামপুর-শ্রীমন্তকোলা খুবই বর্ধিষ্ণূ গ্রাম। গ্রামে প্রায় সাড়ে ছ’শো পরিবারের বসবাস। শিব, কালী, শীতলা নানান দেবদেবীর মন্দির। মন্দির পরিচালনার জন্য পৃথক পৃথক কমিটি ও পরিচালক। ব্যাঙ্ক, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা, প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শিক্ষিত লোকজন কোন কিছুর অবভাব নেই। সেই রকম এগিয়ে থাকা একটি গ্রামের এমন ঘটনায় হতবাক অনেকেই। তবে অবাক নয় গ্রামের অনেকেই কারন গ্রাম্য মাতব্বর আর রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধিতা করলে এরকমই নাকি প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়।

যাঁর নামে এই ঢোল পেটানো হচ্ছে সেই গ্রাম কমিটির সম্পাদক গৌতম হালদার বলেন, ‘ঘটনা সত্যি। শুভ্রাংশু চক্রবর্তী আমাদের গ্রাম কমিটিকে অপমান, গালিগালাজ, এবং বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা করেই চলেছে। গ্রামের সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে শিব মন্দির করার পরেও শুভ্রাংশু বলেছে, কমিটি নাকি লোকের বালি চুরি করে মন্দির করেছে। তাঁকে ডেকে বার বার আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছেন কমিটির সদস্যরা। গত রবিবার দুপুর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গ্রামের স্কুলের মাঠে গ্রাম বৈঠক হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠক চলাকালীন তিনবার শুভ্রাংশুর বাড়িতে আমাদের কমিটির লোকজন ডাকতে গেছেন। তিনি আসেনি। পাল্টা তিনি বলেছেন, আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি। এরপরেই অপমানিত গ্রামবাসীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আমার ব্যক্তিগত কোনও ভূমিকা নেই। আমরা এটাও বলেছি তিনি যদি নিজের ভুল বুঝে গ্রামের কাছে আসে, তাহলে ভাবনা চিন্তা করা হবে।”

বয়কটের শিকার শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘আমি বিজেপি করি। একশো দিনের কাজের টাকা অন্যের জবকার্ডে ঢুকেয়ে মন্দির তৈরির কাজে লাগিয়েছে। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি বলেই আমার নামে ঢোল পিটিয়ে আমাকে সামাজিক বয়কট করা হয়েছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি কারোর কাছে যাবোও না। তাতে সারা জীবন একঘরে করে রাখলে রাখবে। যদি ওরা আমাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয় চলে যাব।”
ঘনরামপুরের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল নেতা অসীম হাজরা বলেন, ‘বিষয়টি পুরোপুরি গ্রাম্য ব্যাপার। এর সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই। গ্রামের কাজে অসহযোগিতা ও গ্রাম কমিটিকে অপমান করার জন্য গ্রাম বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে এখনো এই চল আছে। এর আগেও অনেকের বিরুদ্ধে এরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত না নিলে এতবড় গ্রামকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যাবেনা। সবাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। এটা কোন রাজনৈতিক ব্যাপার নয়। পুরোপুরি গ্রাম্য বিষয়।”

বিষয়টি আইন সম্মত নয় স্বীকার করে নিয়ে চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ী বলেন,”খবর নিয়ে জেনেছি সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি পরিসেবা পেতে যদি কোন অসুবিধা হয়, যদি উনি কোন অভিযোগ করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”

RELATED ARTICLES

Most Popular