নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া। এমনিতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় নাস্তানাবুদ পূর্ব মেদিনীপুর। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। আক্রান্তের নিরিখে কলকাতার ছোঁয়ার বাইরের জেলা হিসাবে শুরু থেকেই জেলার নাম উঠেছিল রেড জোনে। জেলার তমলুক, হলদিয়া, এগরার পাশাপাশি সদ্য আক্রান্তের তালিকায় উঠে এসেছে কাঁথি মহকুমায়ও। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাস্তানাবুদ পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি স্বাস্থ্য জেলা পূর্ব মেদিনীপুর সদর ও নন্দীগ্রাম। তারই মধ্যে এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের হাত ধরে জেলায় করোনা প্রবেশের দুঃসংবাদ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে তমলুক ও পটাশপুরের বাসিন্দা মুম্বই ও দিল্লি ফেরত দুই পরিযায়ী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছে। দুজনকেই পাঁশকুড়ার বড় মা করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মন্ডল। জানা গেছে, গত ১৪মে মুম্বই থেকে তমলুকের উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাড়িতে ফিরেছিলেন বছর আটাশের করোনা আক্রান্ত ওই যুবক। আসানসোলে নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল তাঁর। শুক্রবার তাঁর পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পটাশপুর ২ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের পরিহারপুর এলাকার বছর বাহান্নর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন ৩ দিন আগে। তাঁর নমুনাও সংগ্ৰহ করা হয়েছিল আসানসোলে। শনিবার পজিটিভ রিপোর্ট পায় স্বাস্থ্য দপ্তর। দুই আক্রান্তের পরিবারের লোকেদের ভর্তি করা হয়েছে চন্ডিপুর হাসপাতালে।
যদিও আক্রান্তের পাশাপাশি জেলাতে সুস্থ হওয়ার ঘটনাও ভাল মাত্রায় রয়েছে। শনিবারই পাঁশকুড়া বড় মা হাসপাতাল থেকে করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক গ্রামের বৃদ্ধ পান ব্যবসায়ী। প্রায় ২ মাস ধরে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরিবারের অনুরোধে কয়েকদিন আগে তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল পাঁশকুড়ার করোনা হাসপাতালে। শনিবার তাঁর দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ দেখেই হাসপাতল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। যদিও এই পরিবারের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ভাইয়ের।
এদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্তের ঘটনায় কপালে ভাঁজ স্বাস্থ্যকর্তাদের কারন জেলার নন্দীগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ অংশেই ফিরছেন পরিযায়ীর দল। মহারাষ্ট্র তামিলনাড়ু কর্ণাটক দিল্লির মত করোনা আক্রান্তের শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলিতে কাজ করতেন এঁরা। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানিয়েছেন জেলায় সরকারি পরিসেবায় লেভেল থ্রি এবং ফোর হাসপাতাল বলতে বড়মা কোভিড হাসপাতাল যেখানে জেলা ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম থেকে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের হাত ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল হয়ে পড়বে। তিনদিন আগেই এই হাসপাতালে এক সাথে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারনে ভর্তি হতে হয়েছে।