নিজস্ব সংবাদদাতা: বরং বলা যাক, ‘মারে করোনা রাখে কে?’ কলকাতা, হাওড়া করোনা সংক্রমনের ডিপো হয়ে উঠেছে। তাই ওখানকার হাসপাতাল গুলো বিপজ্জনক, কোনও অসুস্থ রোগীকে ওখানকার হাসপাতালে ভর্তি করলে রোগীর করোনা হয়ে যেতে পারে এরকমই ধারনা করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রশিক্ষন (ইন্টার্ন) তাঁর অসুস্থ বাবাকে নিজের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করেছিলেন মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে। অন্য অসুখ থাকলেও তাঁর উপসর্গ থাকায় করোনা টেস্ট হলে দেখা গেল ওই ব্যক্তিই কোভিড পজিটিভ! একেই বলে কী না, মারে করোনা রাখে কে?’ ঘটনায় রীতিমত শোরগোল পড়ে গেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ঘটনার পরেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে মেডিসিন বিভাগটি সিল করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই পাশাপাশি মেডিসিন বিভাগের সমস্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ চন্দ্র বেরা। পাশাপাশি ওই বিভাগে থাকা প্রায় দু’ডজন রোগী ও রোগীর সংস্পর্ষে থাকা আত্মীয়দের প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
জানা গেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা বিদ্যার ওই ইন্টার্নয়ের বাড়ি হাওড়া জেলার সাঁকরইলে। কয়েকদিন ধরেই কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁর বাবার। যেহেতু হাওড়া ও কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং সংক্রমনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে তাই পরিবার আলোচনা করে ঠিক করে ওই ব্যক্তিকে আপাত নিরাপদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই ভর্তি করা হবে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ইন্টার্ন হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। সেই মত দুদিন আগেই ব্যক্তিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ১০ জনের করোনা পরীক্ষার ফল আসতেই দেখা যায় ওই ব্যক্তিই পজিটিভ।
ঘটনা জানাজানির পর রোগী ও তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হলেও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ”আতঙ্কের কিছুই নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি মাত্র ২ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাছাড়া ওয়ার্ডের প্রত্যেক রোগীরই স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা হবে, করোনা পরীক্ষা করা হবে এমনকি যদি রোগীর কোনও পরিবার রোগীর সংস্পর্ষে এসে থাকেন তাঁরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।”
এদিকে মঙ্গলবার কলকাতার বি.এম.বিড়লা হাসপাতালে চন্দ্রকোনা থানার ক্ষীরপাই পৌরসভার ৮৪ বছরের যে বৃদ্ধের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল বর্তমানে এম.আর বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ আগে যেহেতু মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাই হাসপাতালের একটি বড় অংশ সিল করা হয়েছে। এই বৃদ্ধের ছেলে মেদিনীপুর শহরের গেট বাজার সংলগ্ন একটি অভিজাত পাড়ায় থাকতেন । মেদিনীপুর শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যা কিনা রেল স্টেশনের আরপিএফ ব্যারাক সূত্রে আগেই কনটাইনমেন্ট জোন ঘোষিত হয়েছিল তা আরও একটু সম্প্রসারিত করে ওই অভিজাত এলাকা অবধি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে সুস্পষ্ট ভাবে মেদিনীপুর শহরকে আশ্বস্ত করে বলে হয়েছে মেদিনীপুর শহরে এখনও অবধি কোনও বাসিন্দার করোনা সংক্রমনের ঘটনা ঘটেনি তাই অযথা আতঙ্কের কোনও কারন নেই তবে সামাজিক দূরত্বের বিধি ও অপ্রয়োজনীয় বিচরন বন্ধ করতে হবে। এখনও অবধি এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্ষীরপাইয়ের বৃদ্ধকে ধরে ১৩। আলাদা করে এই জেলার তিন বাসিন্দার নাম রাজ্য তালিকায় থাকলেও তাঁরা কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ভিন জেলায় থাকেন। ১৩ জনের ১০ জনই সুস্থ তাই সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা জেলায় ৩জন। কোনও মৃত্যুর খবর নেই। আর মেদিনীপুর মেডিক্যালে আক্রান্ত ব্যক্তি হাওড়া থেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন এ বিষয়ে নিশ্চিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।