নিজস্ব সংবাদদাতা: রবিবারের বিরতির পর সোমবার, ফের ভিজতে চলেছে খড়গপুর মেদিনীপুর সহ দক্ষিনবঙ্গের একটি বড় অংশ। সোমবার ফের বজ্রগর্ভ মেঘ সহ ঝড়ের আভাস ওই সংলগ্ন এলাকায়। এপ্রিলের শেষের দুদিন আর মে মাসের প্রথম দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে খড়গপুর,মেদিনীপুর ও সংলগ্ন এলাকায়। ঝড়বৃষ্টিতে প্রায় ভেসেছিল দক্ষিণবঙ্গ। দফায় দফায় কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে মাঝ বৈশাখে। সোমবারও শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। সেই সঙ্গে একাধিক জেলাগুলিতে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
টানা এই আবহাওয়া সম্পর্কে আবহবিদরা বলছেন, এ বার ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি টানা তৈরি হচ্ছে। বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের অফুরন্ত জোগান দিচ্ছে বঙ্গোপসাগর। ফলে ভরা বৈশাখে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠা ছুঁতে পারছে না। আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাস ওয়েদার রিপোর্ট অনুযায়ী সোমবার সকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান ৭৪ শতাংশ।শুরু থেকেই ৮কিলোমিটার বেগে বাতাস ছিল।
সোমবার সকাল থেকেই মেঘপুর্ন আকাশ থাকলেও বেলা বাড়লে রোদ ঝলমল হয়ে উঠেছিল আকাশ। খড়গপুর ও মেদিনীপুরে ওই সময় যথেষ্ট তাপও অনুভূত হয়। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকে হঠাৎই বদল হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে এবং আকাশ ঢেকে যায় ঘন কালো মেঘে। বিদ্যুৎ চমক ও মেঘের গুরুগম্ভীর আওয়াজের সাথে শুরু হয় বৃষ্টি। তাপমাত্রা বেশ কিছুটা কমে যায়। যদিও বেশিক্ষণ এটা স্থায়ী হয়নি তবে আকাশে ভারী মেঘ অবস্থান করছে ফলে দিনভর সম্ভবনা ঝুলেই রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। পরে তা ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে। এর ফলে আন্দামান ও নিকোবরে বৃষ্টি হবে কিন্তু ৬ মে পর্যন্ত আর তার প্রভাব এ রাজ্যের উপরে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, মঙ্গল ও বুধবার বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপট বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। রয়েছে কালবৈশাখীর সম্ভাবনাও। ভারী বৃষ্টি হতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায়।
অন্যদিকে আশার কথা শুনিয়ে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় উম্ফান আরও দেরিতে আসছে বলে যানা যাচ্ছে। আগে মনে করা হচ্ছিল ৩ মে মায়ানমারে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড়। একাধিক আন্তর্জাতিক আবহাওয়ার মডেল দাবি করেছে, উম্ফান অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে পড়েছে তবে ভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় পিছিয়ে গিয়ে হয়েছে ১৩–১৪ মে।আঞ্চলিক হাওয়া অফিস, ট্রপিকাল সাইক্লোন দিল্লির মতে, মে মাসের ১ তারিখে দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্ন চাপ অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়। সেটির কারণে ঝড়ের গতিবেগে পার্থক্য তৈরি হওয়ায় হয়ত স্থলভাগে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে উম্ফানের ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট–এর মত অনুসারে, এই নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে একটি ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ে। যা প্রথম পৌঁছবে উত্তর অন্ধ্র থেকে দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলে।
পূর্ব দিক থেক অত্যাধিক হাওয়ার ফলে এই ঘটনা ঘটতে পারে।তারপর, ১৩ মে নাগাদ এই ঝড় আরও উত্তরের দিকে সরে যাবে, তারপর মায়ানমারে আছড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।ভারতীয় ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ সংস্থারও মত কিছুটা এমনই। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজি, পুণে এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উপকূলে এই ঝড় আসবে ১২ মে, তারপর উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে সরে গিয়ে ১৩ মে মায়ানমারের মাটিতে আছড়ে পড়বে। এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে বা দক্ষিনবঙ্গে কতটা পড়বে তা এখুনি বলা যাবেনা।