নিজস্ব সংবাদদাতা:করোনা আতঙ্কে হিম হয়ে আছে দেশ। আতঙ্ক এতটাই প্রবল যে, স্বাভাবিক মৃত্যুও ঠাঁই পায়না শ্মশানে। হাসপাতাল বা এলাকার বাইরে মৃত্যু হলে আরও বিপদ। এলাকায় মৃতদেহ আনার চেষ্টা করলে পরিবার শুদ্ধ এলাকা ছাড়া হওয়ার আশংকা। তাই মৃতদেহ হাসপাতালে বা অন্য কোথাও ফেলে আসতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। এমনই এক মর্মস্পর্শী ঘটনার স্বাক্ষী রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার একটি গ্রামের পরিবার। গ্রামে তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনায় মহা ফাঁপরে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে রাতে হয়েছে প্রতিমা মুখার্জি নামের ৩১বছরের গৃহবধূর। মহিলার নিজের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায়। বছর তিনেক আগে দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার উত্তর বসুটিয়া গ্রামে থাকতেন তিনি। প্রতিমা নিজে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বেলদায় বাপের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা চলছিল কলকাতা ও মেদিনীপুরে। কদিন আগে শারীরিক অসুস্থাতা নিয়ে ভর্তি হন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রতিমার। এরপর তাঁর পরিবারের লোকজন মৃত দেহ সৎকার করতে চান মেদিনীপুরের শ্মশানে। কিন্তু অনুমতি না মেলায় দেহ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান তাঁরা। ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক আধিকারিক বলেন,’ পরিবারের লোকজনকে দেহ নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁরা দেহ না নিয়েই পালিয়ে যায়। ফলে আমরা পড়েছি সমস্যায়। দেহ আপাতত মর্গে রাখা হয়েছে।’
পরিবারের লোকজন অবশ্য দেহ ফেলে আসার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য দেহ দাহ করার জন্যই তাঁরা মেদিনীপুর শ্মশানের অনুমতি চেয়েছিলেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। পুলিশও সহযোগিতা করেনি তাঁদের। বাধ্য হয়ে তাঁরা দেহ রেখে এসেছেন। মৃত প্রতিমার ভাই বিশ্বজিত পন্ডিত জানান, ‘গত তিন বছর ধরে দিদি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা চলছিল। বুধবার রাতে মেদিনীপুর হাসপাতালে দিদির মৃত্যু হয়। করোনার আতঙ্কে আমরা গ্রামে দেহ নিয়ে যেতে পারছিনা। মেদিনীপুর শহরের পদ্মাবতী শ্মশানঘাটে গিয়ে ছিলাম। দাহ করতে রাজি হয়নি। পুলিশকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। গ্রামে দেহ নিয়ে গেলে আমাদেরও ঢুকতে দেবেনা। দাহ করতে গ্রামের কেউ সহযোগিতাও করবেনা। তাই দেহ ফেলে রেখে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।’
পুলিশ জানিয়েছে, মেদিনীপুর শহরের শ্মশানে এই মুহূর্তে বাইরের দেহ দাহ করতে গেলেই সমস্যা হচ্ছে। এর আগেই কয়েকটি দেহ দাহ করার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখানোয় তা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বিকল্প ব্যবস্থা ভাবছে। বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। প্রতিমার পরিবার অবশ্য বলছে পুলিশ চাইলে তাঁরা দেহ সৎকারের অনুমতি দিয়ে দেবেন কিন্তু গ্রামে দেহ আনার কোনও চেষ্টাই তাঁরা করবেননা।