নিজস্ব সংবাদদাতা: ৪২ দিন কেটে গেছে লকডাউনের। বিহারের ভাগলপুর , মাধেপুরা, খাগাড়িয়া থেকে খড়গপুরের ট্রাফিক এলাকার একটা ঘুপচি ঘরে পড়ে রয়েছেন আয়ুব, সালাউদ্দিন, হাকিম সহ ২০জন। রেলের বাতিল হয়ে যাওয়া কামরার সরঞ্জাম অকশনে কিনে নিয়ে ঠিকাদারের কর্মী ওরা। সেই সব সরঞ্জাম কেটে কুটে সাজিয়ে গুছিয়ে ঠিকাদারের লরিতে তুলে দেওয়াই ওদের কাজ কিন্তু সেই কাজ এখন বন্ধ। চলে গেছে ঠিকাদার। অগত্যা আশেপাশের মানু্ষের দেওয়া ত্রাণের চাল আর আলুই ভরসা। যে চালে ভাত হয়, পায়েস, পিঠেপুলি এমন কী ইডলি ধোষাও হয় সে চালের এখন একটাই রূপ পান্তা! শুধু ভাত তো আর গলায় নামেনা, ঝোল চাই, ঝাল চাই নিদেন পক্ষে ডাল ! সে সব এখন মিলবে কোথায়? গাঁটের পয়সা শেষ হয়ে গেছে কবেই, ঠিকাদারও আর এমুখো হয়নি। সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দুরে আধ পেটা খেয়ে দিন গুজরান করছে বউ বাচ্চা বুড়ো বাবা মা। পয়সা পাঠাতে পারা যাচ্ছেনা তাঁদেরও। অভিশপ্ত এক করোনা আর তার জেরে লকডাউন যেন অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে এই ২০জন পরিযায়ী শ্রমিকের জীবনে। তাই ডাল নয় , ঝোল নয় ভরসা কেবলই জল। আর সেই জলে ভেজানো ভাতই ভরসা এঁদের।
এই ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা কার্যত কৃতজ্ঞ খড়গপুরের প্রতিবেশিদের কাছে কারন সীমিত সামর্থ্যর মধ্যেও তাঁরা চাল আর আলুর জোগান টুকু দিয়ে রেখেছেন না হলে বেঁচে থাকাটাই মুশকিল হয়ে যেত। কিন্তু তারমধ্যেও চিন্তা সেই সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দুরে থাকা নিজ নিজ পরিবারের জন্য। গঙ্গা নদীর এপার ওপারের এই বাসিন্দাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলোর আবদার ছিল ইদের আগে বাড়ি ফেরার সময় কার জন্য কি নিয়ে যেতে হবে। পাশাপশি স্ত্রী আর বাবা মা , ভাই বোনদের আবদারও। কিন্তু এখন শুধু বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। আয়ুব, সালাসুদ্দিনরা জানালেন, যদি সরকার রাজি থাকত আমরা হেঁটেই চলে যেতাম।
ভাবতে ভাবতেই চলে এসেছে ইদ! খুশির ইদ। ইদ বরাবরই খুশির! হাজারও অভাব , অভিযোগ , দুঃখ দারিদ্র , মহামারি এমন কি এই বিশ্ব অতিমারির সময়েও ইদ খুশিরই হয় । ফল নেই , ফলার নেই, পেস্তা কিংবা আরবি খেজুর নেই তবুও উপবাস, রোজা থাকে। দিনান্তের ভাত জলে ভিজিয়ে রেখে পান্তা করে তাই খেয়ে রোজা ভাঙে আয়ুব , সালাউদ্দিন, হাকিমরা। রোজার শেষে প্রার্থনা, দোয়া, মোনাজাত। বাসি ভাত খেয়েই তাঁরা মোনাজাত করে, দুনিয়াকে অভিশাপ মুক্ত কর ঈশ্বর, হে আল্লা , আবার আমাদের সবার, সারা বিশ্বের সমস্ত মানু্ষের তার চেনা পৃথিবীকে ফিরিয়ে দাও ।