নিজস্ব সংবাদদাতা: রবিবারের পর সোমবার, ২৪ ঘন্টায় পুরো বদলে গেছে ছবিটা। যেন খেলার মাঠের ড্রিবলিং অনুশীলন করতে আসা খেলোয়াড়দের জন্যই নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে সবজি ওয়ালারা। করোনা সংক্রমনের সতর্কতায় গোলাবাজার থেকে সরে আসা খড়গপুরের বি.এন.আর গ্রাউণ্ডে বসা শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরো সবজি বাজারে যারা বাজার করতে গেছেন রবিবার সকাল অবধি সোমবার সকালে গেলে তাঁদের নিশ্চিত ভাবেই একবার চোখ কচলে নিতে হবে আর ভাবতে হবে যে ঘুমের ঘোরে হয়ত ভুল করে অন্য কোনও বাজারে এসে পড়েছেন কিনা!
কোথায় সেই গা ঘেঁসাঘেঁসি করে বসা পিঠ চুলকানোর দুরত্ব! কোথায় একে অপরের ঘাড়ের ওপর ঝুঁকে ঢেঁড়শ ঝিঙে পটল আলু কেনার মজা! তার বদলে ঘুরে ঘুরে বাজার করতে কোমর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে বাড়ির ফি সকালের বাজার বাবুদের। এক জায়গা থেকে পুইশাক কিনে অন্য জায়গায় কুমড়ো খুঁজতে খুঁজতে ব্যাগের মধ্যে শাক যেন সেদ্দ হওয়ার যোগাড়।
২৪ঘন্টার ছবিটা অবশ্য এমনি এমনি বদলায়নি। ক্রেতা বিক্রেতাদের এতদিনের স্বভাব একদিনে বদলে গেছে এমনটা নয়। বাজার সরে আসার পর থেকে বারবার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা বুঝিয়ে বুঝিয়ে সোজা আঙুলে ঘি তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। মজলিসি বাজার বাবু আর ততোধিক মজলিসি বিক্রেতাদের বোঝানোই যায়নি যে, এই বাজারে আসা শহর ও শহরতলির কারও একজনের করোনা পজিটিভ হলে শুধুই ৫ লাখি শহরটাই নয়, সংক্রমনে উজাড় হয়ে যাবে শহরতলিও। আর তারপরই রুদ্ররুপে নামতে হয়েছে পুলিশকে।
রবিবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খড়গপুর কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ আর খড়গপুর টাউন থানার ইনসপেক্টর ইনচার্জ রাজা মুখার্জীর নেতৃত্বে অভিযানই বদলে দিয়েছে বাজারের রূপ। গা ঘেঁষে বসা সমস্ত দোকানের ছাউনি খুলে দিয়ে এদিনই শেষবারের মত পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন দুরত্ব বজায় না রাখলে আর মুখে মাস্ক না পরলে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েরই জায়গা হবে ফাটকে। সমস্ত ছাউনি খুলে নিয়ে মাঠ জুড়ে নির্দিষ্ট দুরত্বে পুলিশ চুন দিয়ে স্থান নির্ধারন করে দেয় ।
রবিবার সকালেই দ্য খড়গপুর পোষ্ট শহরের বাজার গুলির অবস্থান আর অবস্থা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল। সেখানেই তুলে ধরা হয় এই বাজারের ভয়াবহ অবস্থার কথা। খবর প্রকাশের পরেই তীব্র প্রতিক্রিয়াও হয় শহর জুড়ে। অনেকেই জানিয়েছিলেন যে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। কেউ কেউ হতাশ হয়ে বলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। পুলিশের অভিযানের পর আরও একটি খবর প্রকাশিত হয় সন্ধ্যাবেলাতেই। সেই খবর পেয়ে মানুষ খুশি হয়, পুলিশকে অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন আসে দ্য খড়গপুর পোষ্টের জন্য। এরপর সোমবারের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য।
বি.এন.আর গ্রাউন্ড যেখানে শত শত ছেলে মেয়ে খেলাধুলা করে, অনুশীলন করে। যাঁরা ফুটবল খেলেন তাঁরা অনায়াসে ড্রিবল করতে করতে ঘুরে ফিরে চলে যেতে পারেন সবজি দোকানগুলোর মধ্যে দিয়েই। সোমবার বাজার করতে আসা মানু্ষের অনেকেই বলেছেন, ”এটাই জরুরি ছিল। আমরাই নিয়মটা ভেঙেছিলাম, এখন বুঝতে পারছি নিয়মটা মানা কত জরুরি ছিল। ধন্যবাদ খড়গপুর পুলিশ।” বিএনআর মাঠের সোমবারের দৃশ্য সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে সুভাসপল্লী, ভবানীপুর এবং সংলগ্ন রেল আবাসনের বাসিন্দাদের। মাঠের ওই গাদাগাদি অবস্থা এঁদেরই সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রেখেছিল।