নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিমান বোঝাই করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (HCQS)উড়ে গেছে ট্র্যাম্পের দেশে। এক হুমকিতেই নিয়ম বদলে ওষুধ গেছে মার্কিন মুলুকে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দেশের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রেখেই নাকি পাঠানো হয়েছে আমেরিকায়। বলেছিলেন, দেশের মানু্ষের কোনও অভাব হবেনা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের। কিন্তু খড়গপুর গ্রামীন থানার গোকুলপুরের হীরা খামরুইয়ের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। কিডনির রোগী হীরার কপালে জুটছেনা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। মহকুমা শাসক থেকে জেলা শাসকের দরবারে ছুটেও লাভ হচ্ছেনা। ওষুধ না পেয়ে হতাশ রোগীর পরিবারের লোকজন। মাথা খোঁড়া ছাড়া আপাতত উপায় নেই তাঁদের।
হীরার সম্পর্কে কাকা অশোক দাস বলেন, ‘আমার ভাইঝি হীরা খামরই বেশ কয়েক বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছে। বিগত সাত আট বছর কলকাতার রামকৃষ্ণ সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা চলছে। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে কিছুটা সুস্থ আছে। কিন্তু এই লকডাইনের ফলে এই ওষুধ কোথাও পাচ্ছিনা। ওষুধটির জন্য স্থানীয় বিডিও, এসডিও এমনকি জেলাশাসকের কাছেও গিয়েছি । কোথাও কিছু সুরাহা হয়নি। দশ দিন হল ওষুধ শেষ। কী যে করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা’।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওষুধটি হল HCQS 200 ট্যাবলেট অর্থাৎ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় যে চাহিদা বিশ্ব জুড়ে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা যখন তুঙ্গে, তখন বাজারে অমিল এই ওষুধটি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ গিরিশ চন্দ্র বেরা বলেন, ‘বাজারে এই ওষুধ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না’।হীরা খামরই পশ্চিম মেদিনীপুরের গোকুলপুরের একাদশী দোলইয়ের কন্যা। বিয়ে হয়েছে আনন্দপুর থানার বেলামহারাজপুরে। বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। শরীর খারাপ হওয়ার জন্য মেয়ে রয়েছেন মায়ের কাছে। হীরার মা ঠান্ডা দোলই বলেন, কোনদিন এমন অবস্থা হয়নি। হঠাৎ করে কী যে হল জানিনা। বাজারে কোথাও অষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। শুনছি এই ওষুধ নাকি করোনার চিকিৎসায় লাগছে। তাই এখন কোথাও ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছেনা। ওষুধ না পেলে মেয়ের যে কী হবে জানিনা!’
এদিকে আমেরিকাকে ছাড় দেওয়ার পরেই ওষুধ চেয়ে বসেছে অন্যদেশ গুলিও। একই নিয়ম মেনে ওষুধ দিতে হবে তাদেরও। আর তারপরই বিপর্যয়ের সময় দায়বদ্ধতা দেখিয়ে বাংলাদেশ-সহ একাধিক পড়শি দেশগুলিতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। ইতিমধ্যেই রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবারই ভারত সরকার জানিয়েছে, ১০ টন ওষুধ নিয়ে মঙ্গলবার এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান শ্রীলঙ্কা পৌঁছায়। বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, সেশেলস, মরিশাস এবং কিছু আফ্রিকার দেশ ভারতে তৈরি এই ওষুধ পাবে। এ ছাড়া প্যারাসিটামল ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে ভারতীয় ফার্মাসিউক্যালস কোম্পানিগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, স্পেন, ব্রাজিল, বাহরাইন ও জার্মানির কাছে এ ওষুধ রপ্তানিতে ভারত সরকার সবুজ সংকেত দিয়েছে।
কিন্তু তাতে গোকুলপুরের হীরা খামরুইয়ের কী অপরাধ ? সাত বছর ধরে যে ওষুধ খেয়ে এসেছে, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে সেই ভারতের কাছে চেয়ে বসেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প।আর তারজন্য তাঁদের ওষুধ মিলবেনা ? অশোক দাস বলেন, ”ভাইঝি যে এমন একটি ওষুধ খাচ্ছিল, তা টের পেলাম এই লকডাউনে। তিনি বলেন, কেউ যদি এই ওষুধ ব্যবস্থা করে দেন আমরা পুরো পরিবার কৃতজ্ঞ থাকবো তাঁর কাছে”
ঘটনা হচ্ছে শুধুই খড়গপুর বা মেদিনীপুর নয় , ওষুধ প্রায় হাওয়া হয়ে গেছে কলকাতা ও হাওড়া থেকেও। হাহাকার পড়েছে সেখানেও।
হীরার দেখার পর এক চিকিৎসক জানান, ”সম্ভবত এই রোগী ক্যান্সার, এস.এল.ই (সিস্টেমেটিক লুপাস এনজেথীমেটোসিস) সহ বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। এছাড়া কিডনি ও আর্থাইটিস ও অন্য কিছু রোগের জন্য এই ওষুধ অনেককেই নিয়মিত খেতে হয়। ” না, মোদিজীকে ওষুধ বাইরে পাঠাতে বারন করেননি এঁরা। এঁদের একটাই বক্তব্য, দেশের মানুষের কথা ভেবেই তো স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মতই ৪ এপ্রিল এই ওষুধটিকে বাইরে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং সেটা যে কতটা জরুরি ছিল এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন হীরা খামরুইরা। তাঁদের বক্তব্য মোদিজী আমেরিকা প্রেম দেখাতেই পারেন কিন্তু তার জন্য ভারতের রুগীরা এই ওষুধ থেকে বঞ্চিত হবে কেন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক রশ্মি কমল জানান, ” হয়ত উনি আমার দপ্তরের কারও সাথে দেখা করেছেন কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা হয়নি । যাই হোক বিষয়টা যখন জানতে পেরেছি তখন আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি ওনাদের কাছে যদি ওষুধটা পৌঁছে দেওয়া যায়।”