নিজস্ব সংবাদদাতা: একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এমন অনেক ছোট ছোট বিষয় লুকিয়ে থাকে যাকে একত্রিত করলে একটি সামাজিক সংকট, চিত্র ইত্যাদি সামনে আসে। আর সেই করনেই তৈরি হয়েছিল পরিসংখ্যান বিদ্যা। আমরা যখন দেশের করোনার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করছি তখন এই করোনাকে রুখতে চালু করা লকডাউনের কারনে মৃত্যুর সংখ্যাটা অস্বীকার করতে পারিনা কারন সে মৃত্যুটা এখনও অবধি করানোর কাছাকাছি দিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই লকডাউনের কারণে অন্ততঃ ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনায় যত না মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে লকডাউনে। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালোভাবে পরিকল্পনা করে লকডাউন কার্যকরী করা হলে হয়তো অনেক মানুষের মৃত্যু আটকানো যেত। আর এখনও সতর্ক ও সরকার সচেষ্ট না হলে লকডাউনের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে ।
লকডাউনের ফলে সমাজের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যানটিও নিবন্ধন করেছেন তিন সমাজ গবেষক তেজেস জিএন, কণিকা শর্মা ও আমন। আর এটা করতে গিয়ে তাঁরা নির্ভর করেছেন সারাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ গুলির ওপর। আর তারপরই বেরিয়ে এসেছে লকডাউন পর্যায়ে মৃত্যু সম্পর্কিত কিছু এই ধরনের তথ্য।
যেমন লকডাউনের কবলে পড়ে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে অনাহারে, মানসিক অবসাদে কিংবা বিনা চিকিৎসায়। অনেকেই আবার খাবার জোগাড় করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন। অতি সম্প্রতি অনাহার ক্লিষ্ট মা তাঁর পাঁচ সন্তানকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেছিলেন। রাস্তায় ক্ষুদা ক্লান্ত ২৯বছরের তরুনী শ্রমিক গঙ্গাম্মার খবরও শিরোনামে এসেছিল। অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে বিহারের জেহানাবাদে দুদিন আগেই মায়ের কোলেই বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে তিনবছরের শিশুকে।
হঠাৎ করে লকডাউন। রাতারাতি শ্রমিকদের কোনও পয়সা না দিয়েই তাড়িয়ে দিয়েছে মালিকরা। ভাড়াবাড়ির মালিক থাকতে দেয়নি। আর রাস্তায় নেই বাস ট্রেন বা অন্য যান । ফলে ঘরে ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা বাধ্য হয়েছিলেন শতাধিক কিলোমিটার হাইওয়ে রাস্তা হাঁটতে। এভাবে হেঁটে ঘরে ফেরার সময় তাদের অনেককেই পিষে দেয় নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ি। এভাবে পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় ৩৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সংঘর্ষে ৭জন নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকে গেরুয়া ব্রিগেডের অনেকেই স্বঘোষিত পাহারাদার হয়ে ওঠে। কেউ লকডাউন ভাঙছে কি না, সেদিকে নজরদারি চালাতে শুরু করে।দেখা গিয়েছে, কেউ লকডাউন অমান্য করলে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ছে এই গেরুয়া বাহিনী। ফলে বাধছে সংঘর্ষ। আর তাতেই এ পর্যন্ত সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন।
নেশার মদ না পেয়েও বেশ কিছু লোক আত্মহত্যা করেছে। তথ্য বলছে, লকডাউনে মদের দোকান, ঠেক সব বন্ধ। তথ্যমতে, মদ পেয়ে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করেছে। মদকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে মদ না পেয়ে এদের অনেকেই প্রায় পাগল হয়ে উঠেছিল। আর নেশার সময় মদ না পাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এদের মধ্যে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপনি হাসতেই পারেন কিন্তু এঁরা অসুস্থ ধরে নিলে চিকিৎসার সু্যোগ করে দেওয়া যেত।
এ ছাড়া আরও ৩৯ জন আত্মঘাতী হয় এই আতঙ্কে যে তাদের নাকি করোনা হয়েছে। আরও ২১ জনের মৃত্যু কী কারণে তা অবশ্য জানা যায়নি। পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন, এই মৃত্যুর সংখ্যা হিমশৈলের চুড়া মাত্র। আরও অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যেগুলি জানতে পারা যায়নি বা সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়নি। লকডাউন আরও বেড়েছে কিন্তু সরকার বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন কী ? মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা কিংবা গুজরাটের সূরাটের শ্রমিক বিক্ষোভ তেমনটা মনে করছেনা। তাছাড়া জঙ্গল, পাহাড়, প্রান্তিক এলাকায় রেশন পৌঁছাচ্ছেনা বলেই এখনও আভিযোগ। ফলে মৃত্যু আরও কত বাড়বে কে বলতে পারে ? প্রচ্ছদ শিল্পী : জয়ন্ত বর্মন