নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ধরা পড়ল কোভিড ১৯ বা করোনা পজিটিভ। আর এই নিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫। আর দাসপুরে আক্রান্তের খবর যখন আসছে সেই মঙ্গলবার রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে গত ২৮শে মার্চ জ্বর, কাশি ও সংশ্লিষ্ট উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসকরা তাঁকে আইসোলেশনের রাখার পাশাপাশি তাঁর নমুনা পাঠিয়েছিলেন বেলেঘাটা আই.ডি হাসপাতালের নাইসেডে। সোমবার রাতেই নাইসেড জানিয়ে দেয় ৩০বছর বয়সী ওই যুবকের করোনা পজিটিভ। ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে ৩০০ পরিবারের ওই গ্রাম পুরোপুরি সিল করে দিয়েছে পুলিশ। গ্রামের প্রতিটি সংযোগকারি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম থেকে ঢোকা ও বেরুনোর সমস্ত পথ বন্ধ। এলাকায় ছুটে গেছেন পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিকর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মহারাষ্ট্রে সোনার কাজে কর্মরত ওই যুবক হালকা জ্বর ও কাশি নিয়েই ২২তারিখ ট্রেনে করে প্রথমে খড়গপুর স্টেশন ও তারপর বাসে করে দাসপুর থানার গৌরা বাস স্টপেজে নামে। সেখান থেকে বাবার বাইকে বাড়ি যায়। বাড়িতে ফেরার পরেও জ্বর না কমায় এক হাতুড়েকে দেখায়। অভিযোগ মহারাষ্ট্র থেকে ফেরার কথা যুবক জানায়নি। তারপরও জ্বর বাড়তে থাকায় স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায় বাবার সাথেই। চিকিৎসকরা যখন জানতে পারেন যে যুবক মহারাষ্ট্র ফেরৎ তখনই সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যেতে বলেন। ইতিমধ্যেই লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বাইকে করেই বাবার সাথে মেদিনীপুরে যায়। ২৮তারিখ ওই যুবককে ভর্তি করে নেওয়া হয় আইসোলেশন বিভাগে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, ” মঙ্গলবারই আক্রান্তকে বেলেঘাটা আই.ডিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স করে। গোটা গ্রাম স্বাস্থ্যদপ্তরের কড়া নজরদারিতে রয়েছে। পরিবার ছাড়া কারা কারা ওই যুবকের সংস্পর্ষ পেয়েছে তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য সমস্ত উদ্যোগ গ্রহন করছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর।”
এদিকে আতঙ্কে হিম হয়ে আছে দাসপুর থানা থেকে ১২ কিলোমিটার দুরের ওই গ্রাম। গোটা গ্রামে যেন শ্মশানের নীরবতা। যুবকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে বাড়িতে যখন তাঁর মা আর মাস কয়েক আগের বিবাহিত স্ত্রী কান্নাকাটি করছেন তখন ওই বাড়ির ছায়া মাড়িয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার লোক নেই। ওই গ্রামেই বাড়ি দাসপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুনীল ভৌমিকের। ভৌমিক জানান, ”এমন ভয়াবহ ও আতঙ্কের পরিবেশ আগে কখনও দেখিনি। পুরো গ্রামটাই ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। মৃত্যুভয় তাড়া করছে তিনশ পরিবারের প্রায় ১২০০ মানুষকে।”
আতঙ্ক ছড়িয়েছে দাসপুর থানা এলাকাতেও। গ্রাম লাগোয়া সমৃদ্ধ জনপদ সোনামুই বাজার। ওই যুবক বাড়ি ফেরার পর ওখানকারই সাপ্তাহিক হাটে অন্তত দু’বার শশা বিক্রি করে গেছে ওই যুবকের বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। সেই হাটে এই কৃষক পরিবারের সংযোগে কারা কারা এসেছে সেটাও চিন্তার। অন্যদিকে ওই যুবক বাড়ি ফেরার পর অনেক জায়গাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোথায় কাদের সংগে মিশেছেন তাও চিহ্নিত করা জরুরি। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বেরার বক্তব্য, ” কাজটা খুবই কঠিন, যাঁরা ওই যুবকের সংগে মিশেছেন বলে মনে করছেন তাঁদেরও এগিয়ে এসে জানাতে হবে।”
ব্লক প্রশাসন জানিয়েছেন, আপাতত ওই গ্রামের কেউ কোথাও যেতে পারবেননা, ওই গ্রামে কেউ ঢুকতে পারবেননা। গ্রামের পরিবারগুলির যা প্রয়োজন প্রশাসনই সাহায্য করবে।
তবে দাসপুর ও ঘাটালের কাছে উদ্বেগের আরও একটি কারন রয়েছে। ভিন রাজ্যগুলিতে সোনার কাজে কর্মরত আছেন এমন প্রায় ১৫ হাজার যুবক ফিরে এসেছেন ওই দুটি থানার তিনটি ব্লক এলাকায় এবং ফিরেই বেপরওয়া ভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন। পুলিশকে রীতিমত বেগ হতে হয় এদের লকডাউন মানতে। যেমনটা ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এই যুবকও।