নিজস্ব সংবাদদাতা: সাড়ে তিন বছরের মাথায় আরও এক বিপর্যয়ের মুখে দরিদ্র ভারত। নোটবন্দী নাড়িয়ে দিয়েছিল গরীব ভারতবাসীর ভিত। লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে ফিরেছিলেন ঘরে। কালো টাকার ফেরানোর রাজনীতি নিকষ কালো অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল কয়েক কোটি পরিবারকে। মনুষ্য সৃষ্টি সেই অপরিনামদর্শিতার পর এবার প্রকৃতির রুদ্ররোষ করোনা ভাইরাস। দেশ বাঁচাতে এখন লকডাউন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। কিন্তু বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক-মজুররা কোথায় থাকবেন, কে খাওয়াবে তাঁদের তার কোনো দিশা নেই আর বাধ্য হয়ে শুরু হয়েছে লাখো লাখো মানুষের ঘরে ফেরা। কাতারে কাতারে শ্রমিক পায়ে হেঁটে বা অন্য উপায়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছেন। আর তা করতে গিয়েই ২০০ কিলোমিটার হাঁটার পর দিল্লিতে কর্মরত মধ্যপ্রদেশের এক ডেলিভারি বয়ের মৃত্যু হল হাইওয়েতে।
জানা গিয়েছে মৃতের নাম রণবীর সিং। তাঁর বয়স ৩৮ বছর। একটি অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার হয়ে দিল্লিতে কাজ করতেন মধ্যপ্রদেশের এই যুবক। রণবীর যাত্রা শুরু করেন ৩২৬ কিলোমিটার দুরে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলায় নিজের বাড়িতে পৌঁছনোর জন্য। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় এসে হাইওয়ের উপরেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। শরীর খারাপ লাগায় হাইওয়ের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রণবীর। তখনও গ্রাম থেকে তাঁর দুরত্ব ৮০ কিলোমিটার।
গত তিন-চারদিন ধরেই বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চোখে পড়ছে। হাইওয়ের পাশে বহু মানুষ রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার গাড়ি পাচ্ছেন না। এদিকে টাকা-পয়সাতেও টান। ঠিকা শ্রমিকদের রাতারাতি ছাঁটাই করেছে ঠিকাদার। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি স্থানীয় প্রশাসন। অগত্যা বাড়ি না ফিরে উপায় কী ? তাই অর্ধাহার অভুক্ত অবস্থাতেও মানুষ বাড়ি ফিরছেন। হাঁটছেন শত শত মাইল। আর সেই হাঁটতে হাঁটতেই ঘরে ফেরার আগেই মৃত্যু হল যুবকের।