Homeএখন খবরঘরে জায়গা নেই , গাছেই কোয়ারেণ্টাইন করে গ্রাম বাঁচানোর উদ্যোগ নিলেন পুরুলিয়ার...

ঘরে জায়গা নেই , গাছেই কোয়ারেণ্টাইন করে গ্রাম বাঁচানোর উদ্যোগ নিলেন পুরুলিয়ার ৭ যুবক

নিজস্ব সংবাদদাতা: গরীবের সংসার । দিন আনি দিন খাই । এমন ঘর বানানোর ক্ষমতা এদের নেই যে ঘরের মধ্যে পরিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচিয়ে নিজের জন্য একটা আলাদা কোয়ারেণ্টাইন কক্ষ করে নেবেন। একই ঘরে গাদাগাদি করে যাদের থাকতে হয় হোম কোয়ারেণ্টাইন তাঁদের কাছে খোয়াব মাত্র। কিন্তু ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে কী না হয় ? তাই করে দেখাচ্ছেন পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর থানার ভাঙ্গিদি গ্রামের ৭ যুবক। গ্রাম থেকে সামান্য দুরে গাছের মাথায় ঘর বানিয়ে হোম কোয়ারেণ্টাইনে তাঁরা। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । আশেপাশের গ্রাম উজাড় করে লোক দেখতে আসছে তাঁদের। এমন অভূতপূর্ব উদ্যোগকে স্যালুট জানাচ্ছে গোটা ভাঙ্গিদি গ্রাম কারন গ্রাম বাঁচাতেই এমন উদ্যোগ।

স্থানীয় সূত্রে জনা গেছে গ্রামের কয়েকজন যুবক গত কয়েকমাস ধরে চেন্নাইয়ে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার করোনার ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য লকডাউনের ঘোষণা করার সাথে সাথে এই সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরে, সাত যুবক চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরতে ট্রেনে ওঠেন । খড়গপুরে পৌঁছানোর পরে এই যুবকদের মেডিকেল চেকআপও করা হয়। এই চেকআপের সময় চিকিৎসকরা তাদের বাড়িতে পৌঁছে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেণ্টাইনে থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। গ্রামে পৌঁছে এই যুবকরা লক্ষ্য করলেন যে তাদের ঘরে জায়গার অভাব রয়েছে, যার কারণে একা একা কোয়ারেন্টাইনে বসবাস করা বেশ কঠিন। এরপর গ্রামবাসীদের সহায়তায় এই সাত যুবক গ্রাম থেকে কিছুটা দুরে একটি বড় গাছে খাটিয়া এবং মশারি টাঙানোর ব্যবস্হা সমণ্ণিত একটি পৃথকীকরণ ইউনিট প্রস্তুত করেন । গত মঙ্গলবার থেকে এই সাত যুবক দুরত্ব বজায় রেখে গাছটিতে অবস্থান করছেন।

গ্রামবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কাছে খাবার ও পানীয় জল সরবরাহ করছেন এবং তার পরে তারা নিয়মের ভিত্তিতে খাবার গ্রহণ করে এবং পরে এই গাছে থাকে। যুবকদের এই ভাবনা দেখে গ্রামবাসীরাও খুব খুশি। ওই যুবকদের বক্তব্য , প্রধানমন্ত্রী ও দেশের মুখ্যমন্ত্রী একই জিনিসকে মাথায় রেখে যেভাবে দেশ ও রাজ্যের মানুষকে মহামারী রোগ করোনভাইরাস থেকে বাঁচানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আমরা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে গ্রামের সমস্ত পরিবার এই সম্ভাব্য করোনার ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকেন। যদিও শারীরিক পরীক্ষা করে ডাক্তাররা আমাদের কারুর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাননি । তবুও যেহেতু তাঁরা আমাদের কোয়ারেণ্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাই আমরা সেই পরামর্শ অনুসরণ করছি।

কিভাবে তাঁরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেন তার উত্তরে যুবকরা জানান, আমাদের গ্রামগুলিতে প্রায় হাতির আক্রমন হয়ে থাকে। হাতির গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য গ্রামের আশেপাশে গাছের ওপর ঘর বানিয়ে নজরদারি করা হয় দিনে রাতে । সেই থেকেই আমাদের মনে হল আমরা যদি সেটাকেই একটু বড় আকারে ভেবে নিই কেমন হয় । যেখানে একটা খাটিয়া আর মশারির ব্যবস্থা করা যায়। এরপরই গ্রামের মানুষদের সাহায্য নিয়ে আমরা এরকম ঘর বানিয়ে ফেলি । এমন উদ্যোগ কে বাহবা না দিয়ে পারা যায় ?

RELATED ARTICLES

Most Popular