নিজস্ব সংবাদদাতা: কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পর চাকরি পেয়েছিল পরিবারের বড় ছেলে। সংসারে মা আর ভাই। শুধু বাবার চাকরি নয় সঙ্গে বাবার দায়িত্ব পালনের ভারও তাঁর নেওয়া দরকার এমনটাই উপলব্ধি ছিল যুবকের কিন্তু স্ত্রী নারাজ সেই দায়িত্ব পালনে। শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক অশান্তি এবং শেষ পরিণতি মৃত্যু। খড়গপুর শহরের তালবাগিচা এলাকায় শেষ অবধি এমনই পরিণতি বেছে নিলেন মাত্র ২৭বছরের এক যুবক। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালবাগিচার দক্ষিণ অংশের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম অসিত নন্দী। আসিতের বাবার মৃত্যু হয় বছর ছয়েক আগে। সেই সূত্রে বছর পাঁচেক আগে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে তাঁর ওই চাকরি পাওয়ায় সম্মতি দেন অসিতের মা ও ভাই। এরপরই অসিতের ফেসবুকে আলাপ হয় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। সেই আলাপ থেকে প্রেম এবং শেষে বিয়ে। বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। একটি শিশু সন্তানও হয় তাঁদের কিন্তু এর পরে পরেই শুরু হয় সমস্যা। আলাদা হতে চায় অসিতের স্ত্রী যা অসিত মেনে নিতে পারেনি।
খড়গপুর যুব তৃনমূল কংগ্রেসের শহর সভাপতি এই তালবাগিচা এলাকারই বাসিন্দা অসিত পাল ওরফে ছোটকা। আসিতদের পারিবারিক সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার সালিশি করার অনুরোধ এসেছিল তাঁর কাছেও। ছোটকা জানিয়েছেন, “অসিতের স্বভাব ছিল খুবই অন্তর্মুখী। চাপা স্বভাবের। সমস্যা খুব মারাত্মক আকার ধারণ না করলে বাইরে সেটা প্রকাশই করতনা। তবুও ওঁর ভাইয়ের অনুরোধে গিয়েছি। ওঁর স্ত্রীকে অনেক বারই বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষ অবধি শিশুকে নিয়ে চলেই যান উনি। তারপর এই ঘটনা। শুনেছিলাম স্ত্রী নাকি আসবে বলে বলেও ছিল কিন্তু লকডাউনে আসতে পারেনি।”
এদিকে প্রতিবেশীদের একাংশ জানিয়েছেন, অসিতের মা অত্যন্ত সহজ সরল যাকে অনেকটাই হাবাগোবা ধরনের বলা যায়। তারপরেও কেন অসিতের বউয়ের অসুবিধা হচ্ছিল তা বোঝা মুশকিল। এদিকে স্ত্রীর সঙ্গে অবনতির জেরে শেষের ছ’মাস চূড়ান্ত মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন ওই যুবক। শোনা যায় নেশাও করতে শুরু করেন। চাকরিও ঠিকঠাক করছিলেন না। তাঁর মানসিক অবস্থার চিকিৎসা শুরু হয়। ক্রমশ সেরেও উঠেছিলেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যে ফের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তার জন্য অপেক্ষা করোনা পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় কিন্ত তার আগেই মঙ্গলবার সব শেষ।
- শহর সভাপতি ছোটকা পাল জানিয়েছেন, ‘আমরা খবর পাই বেলা ১০টার কিছু পরেই। ওর বাড়ি থেকেই খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই। ততক্ষনে প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে ওর দেহ নামিয়ে এনেছিল। শরীর তখনও গরম। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রেলের মেন হাসপাতালে কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন আগেই মারা গেছেন তিনি। শুনেছি এদিন সকালে উঠে ব্রাশ করেছেন। চা খেয়েছেন তারপর ন’টা সাড়ে ন’টা নাগাদ নিজের ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন।’ পরে কী হয়েছিল কেউ জানেনা। তবে অনুমান করা হচ্ছে ফোনে কথা হয়েছিল স্ত্রীর সঙ্গে আর হয়ত সেই একই কথা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।