সংবাদদাতা: সোমবার সন্ধ্যায় খড়গপুর ১নম্বর ওয়ার্ড ইন্দা কমলা কেবিনএলাকায় নিজের অফিসে আক্রান্ত তৃনমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বাবলা ওরফে আশিস সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের হল খড়গপুর টাউন থানায়। অভিযোগ করলেন সেই হায়দার আলী ওরফে ‘মান্টা’ যার বিরুদ্ধে বাবলা হামলার অভিযোগ এনেছিলেন। পুলিশের তরফে অবশ্য প্রথম থেকেই বাবলার ওপর ‘হামলা’ তত্ত্ব অস্বীকার করে ঘটনাটিকে পরস্পরের মধ্যে মারামারির ঘটনা বলা হচ্ছিল। পুলিশের সেই তত্ত্ব মান্যতা পেয়ে গেল তৃনমূল যুব নেতা হায়দার আলীর দায়ের করা অভিযোগে।
বাবলা অভিযোগ করেছিলেন তাঁর পার্টি অফিসে ঢুকেই হামলা চালিয়েছিল তাঁরই দলের পরাজিত বিধায়ক প্রদীপ সরকার অনুগামীরা যারা খড়গপুর শহর যুব তৃনমূলের সঙ্গে যুক্ত এবং নেতৃত্বে ছিল হায়দার। হায়দার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, আক্রমন প্রথমে বাবলাই করেছেন। তাঁর অভিযোগে বলা হয়েছে, মেদিনীপুর শহর থেকে দলীয় কাজ সেরে তারা ফিরছিলেন। কমলা কেবিন এলাকায় ওই পার্টি অফিসের সামনের একটি দোকানে তারা যখন চা খাচ্ছিলেন তখন বাবলাই প্রথমে টোন টিটকারি শুরু করে। কীভাবে তিনি প্রদীপ সরকারকে হারালেন এবং তিনিই যে ওখানকার সব। এই সব বলতে থাকেন। এই নিয়েই কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং সেখান থেকেই হাতাহাতি। সেই সময় একটি স্কুটির ওপর পড়ে গিয়েই মাথা ফেটে যায় বাবলার। হায়দারের আরও দাবি, বিধানসভার পর পৌরসভাতেও আমাদের হারিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বাবলাদা।
যদিও বাবলার দাবি ছিল তাঁর পার্টি অফিসে ঢুকেই তাঁকে মারধর করা হয়।তারপর অফিস থেকে বাইরে বের করে এনে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। খড়গপুর তৃনমূল যুব সভাপতি অসিত পাল বলেছেন, ” বিধানসভা নির্বাচনে শহরে প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন যুব বন্ধুরা। হেরে গিয়ে এমনিতেই তাঁদের মন মেজাজ ভালো নেই। তার ওপর যদি বলা হয়, এবার পৌরসভাতেও আমাদের হারিয়ে দেওয়া হবে তাতে ওদের মনে আঘাত লাগাটা স্বাভাবিক। তার ওপর কথাটা বলছে কে? আমাদেরই একজন নেতা? আমাদের এম.পি নেই, এমএলএ নেই। এবার যদি পৌরসভাতেও হারানোর কথা বলা হয় এবং সেটা বলা হয় দিদির ছবির নিচে দাঁড়িয়ে, তৃনমূলের পতাকা হাতে নিয়ে তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
এমনইতেই বাবলার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে নিজের এলাকায় বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থীর হয়ে গোপনে কাজ করেছেন তিনি। তৃনমুল যুবর এক নেতা জানান, “আমাদের কাছে অডিও রেকর্ড আছে যা আমরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাঠিয়েছি যেখানে বাবলার এলাকার তৃনমূলের এক সক্রিয় কর্মীকে বলতে শোনা গেছে এবার শ্যামল রায়ও ( স্থানীয় তৃনমূল কাউন্সিলর) থাকবেনা আর প্রদীপ সরকারও ( প্রাক্তন তৃনমূল বিধায়ক) থাকবেনা তখন তোরা কার কাছে থাকবি? এই বেইমানি মানা যায়না।” ওই নেতা আরও বলেন, কয়েকদিন আগেই আমাদের এক কাউন্সিলর জগদম্বা গুপ্তাকে বাবলা বলেছে, “দেখলি তো কেমন প্রদীপ সরকারকে হারালাম। জগদম্বা যখন প্রশ্ন করে, আপনি কী বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? উত্তরে বাবলা বলে, টাকা নেইনি বরং নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হারিয়েছি।” যারা দলের মধ্যে থেকেই গাদ্দারি করে এবং তা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ দলের।
অসিত পাল বলেছেন, ” অনেক হয়েছে খড়গপুর শহরে তৃনমূলের ভেতরে থেকেই তৃণমূলকে ছুরি মারার গল্প। দল নদীর মত তাতে হয়ত এই রকম আবর্জনাদের বরদাস্ত করার ক্ষমতা আছে কিন্তু যুবদের তা নেই। আমাদের পরিষ্কার কথা দলের পতাকা ছেড়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির নিচ থেকে সরে এসে যতখুশি বিরোধিতা কর। আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু আমার দলের পতাকা হাতে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর কাজ করবে এটা যুব তৃনমূল কংগ্রেস বরদাস্ত করবেনা। আমরা জি জান লড়িয়ে খাটব আর তোমরা নেতা সেজে বসে থেকে কেউ নিজের ওয়ার্ডে দুহাজার ভোটে, কেউ সাড়ে ৫০০ভোটে হারাবে এটা আর বরদাস্ত করবেনা খড়গপুর শহর যুব তৃনমূল কংগ্রেস।”