শশাঙ্ক প্রধান: একেই বলে চোরের সাতদিন তো গৃহস্থের থুড়ি পুলিশের একদিন। গত প্রায় ১বছর ধরে ডেবরা ও সবং এলাকা থেকে চুরি যাওয়া কয়েকটি বাইক উদ্ধারের পাশাপাশি ৭জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখুনি এ বিষয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও বিশ্বস্ত সূত্রে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও অবধি ৪টি বাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তদন্তের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। জানা গেছে ২জেলার বেশ কয়েকটি থানায় সক্রিয় ছিল এই চক্র।
উল্লেখ্য বেশ কয়েক মাস ধরেই ডেবরা, সবং ইত্যাদি এলাকা থেকে বাইক চুরির ঘটনা ঘটছিল। তারমধ্যে বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল থানাতে। তবে বাইক চুরির একটি দৃশ্য নজরে আসে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২২তারিখে ডেবরা বাজারে। দেখা যায় একটি ওষুধ দোকানের সামনে হাতে একটি থলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক যুবক। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এবং ধিরে ধিরে সরে যাচ্ছে রাস্তার সামনে থাকা একটি বাইকের দিকে। তারপর নিজের চাবি দিয়ে বাইকটি চালু করে মুহূর্তে উধাও হয়ে যায় ওই যুবক।পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে ওই দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেই ফুটেজ সংগ্ৰহ করে পুলিশ।
এই ঘটনার পরই ডেবরা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। একজন বিশেষ তদন্তকারী আধিকারিককে নিয়োগ করা হয় এই কাজে। শুধু ওই বাইকই নয় নজর দেওয়া হয় বাইক চুরির গোটা চক্রটাকেই পাকড়াও করার। সেই মতই কাজ শুরু হয়ে যায়। ডেবরার কয়েকজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালাতে বলা হয় বিশেষ করে যারা পুলিশের সূত্র হিসাবে কাজ করে। এরই মধ্যে আরও কয়েকটি বাইক চুরির অভিযোগ আসে। পুলিশ বুঝতে পারে একটি গ্যাং কাজ করছে এই সব চুরির পেছনে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, পুরানো বাইক বিক্রি বা লেনদেন করে এমন কয়েক জনের ওপর নজর রাখা হয়। এরকমই একজনের সন্দেহভাজন গতিবিধি নজর রাখতে গিয়েই একটি স্থানে কয়েকটি বাইক পাওয়া যায় যেগুলির নম্বর প্লেট ছিলনা। সেই নম্বরপ্লেট বিহীন বাইকই বুঝিয়ে দেয় যে এগুলি চুরি যাওয়া বাইক। অভিযোগ পত্র মিলিয়ে বাইকের বিবরণ মিলে যাওয়ার পরেই ডেবরা থেকে আটক করা হয় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একে একে ৭ জনের হদিস পাওয়া যায় এবং এখনও অবধি উদ্ধার হয়েছে ৪টি বাইক।
জানা গেছে এই ৭জন ডেবরা এবং সবং এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু এরাই সব নয় এ ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েকজন যারা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা। তারমধ্যে আবার কয়েকজন পাঁশকুড়া থানা এলাকার। ধৃত ৭জনের মধ্যে ২জন মূলপান্ডা রয়েছে যারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দিকের সমস্ত অপারেশন চালাতো উল্টো দিকে পূর্ব মেদিনীপুরেও এরকম পান্ডা রয়েছে যাদের কাছে পৌঁছাতে চাইছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা এই অপারেশন চলাকানীন খবর চাউর হয়ে গেলে অনেকে এলাকা ছাড়তে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ একেবারেই মুখ খুলতে নারাজ।
একটি সূত্র জানাচ্ছে বাইক চুরির পরই তার নম্বর প্লেট খুলে নিয়ে সন্ধ্যার পর তা পের করে দেওয়া হত অন্য জেলায়। কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় বাইকগুলি রাখা হত পরে খরিদ্দার যোগাড় করে তা বিক্রি করা হত কম দামে। ৭জনকেই আদালতে পেশ করার পর ২পান্ডাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। ওই জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে নেওয়া হচ্ছে আরও তল্লাশির প্রস্তুতি।