Homeএখন খবরআমাদের অমৃত বিলিয়ে মৃত্যুর দেশে মৃনাল দা! হতবাক মেদিনীপুরের সংবাদ দুনিয়া

আমাদের অমৃত বিলিয়ে মৃত্যুর দেশে মৃনাল দা! হতবাক মেদিনীপুরের সংবাদ দুনিয়া

Mrinalda returned home from the safe home just two days ago. Yesterday, Sunday afternoon also talked to many on the phone. Oxygen saturation is severely low since evening. Colleagues were taking me to Kolkata in the middle of the night but the soil of Medinipur was not clear. The body froze near Kolaghat, the body did not rise or fall. Ambulance had back him to the Medinipur Medical College turned . No, Mrinal Samanta broke the nib of the pen. And he won't write our names, he won't fill out forms, he won't call and say, "But your renewal is coming to an end but! Then don't blame me." You know, no one blames you, you can't blame. Yet you have that strange coinage! Barababu of West Midnapore District Information and Culture Department but for us from shoe sewing to Chandipath, everything is Mrinal Samanta.

নরেশ জানা: ২২ মে মেদিনীপুরে ভ্যাকসিনের লাইনে দাঁড়িয়ে খবরটা এল, মৃনাল দা করোনা আক্রান্ত! শেষ ফোনটা এসেছিল ৭দিন আগে, ‘ নরেশদা, ভ্যাকসিন নিয়েছ?’ ততদিনে ৮০ শতাংশ সাংবাদিকদের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেছে। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে আমিও। তালিকায় প্রথম যেদিন নাম উঠেছিল সেদিন ভ্যাকসিন নিলে এতদিনে দুটো ডোজ কমপ্লিট হয়ে যেত। বললেন, ‘এই শেষ সুযোগ, নিলে নাও, না’হলে আমাকে দোষ দিওনা।’ আমি দোষ দেওয়ার মানুষ নই যদিও, সেটা মৃনালদাও জানত। হেসে ফেললাম, বললাম, তুমি নিয়েছ? এবার মৃনালদা হেসে ফেলল, বলল, ‘তোমার সাথেই নেব।’

২২ তারিখ মেদিনীপুরে আমাদের কয়েকজনের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে খড়গপুর মহকুমা তথ্য সংষ্কৃতি আধিকারিক জয়ন্ত মল্লিক। বললাম, মৃনাল দাকে দেখছিনা? বললেন, মৃনালবাবু কোভিড পজিটিভ! না, শেষ অবধি ভ্যাকসিন নেওয়া হলনা মৃনালদার। যদিও করোনাকে জয় করেছিলেন তিনি। টানা কয়েকদিন যোসেফ হাসপাতালে থাকার পর করোনা মুক্ত হলেন। আরটি/পিসিআর নেগেটিভ। ফোনে কথা হল। বললেন, ‘ ক’দিন মেডিকেল কলেজের সেফ হোমে আছি। দুর্বল আছে শরীরটা। ক’দিন পরে বাড়ি যাব। তারপর জমিয়ে একদিন আড্ডা হবে। তুমিই তো আজকাল আসো না আর।” না, যাওয়া হয়না আজকাল। হয়ত যাব কোনও দিন কিন্তু তুমি যে আর থাকবেনা মৃনালদা!

মাত্র ২দিন আগেই সেফ হোম থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন মৃনালদা। গতকাল, রবিবারও দুপুরে অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে ফোনে। সন্ধ্যার পর থেকে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মারাত্মক কম। সহকর্মী বন্ধুরা মধ্যরাতেই নিয়ে যাচ্ছিলেন কলকাতার উদ্দেশ্যে কিন্তু মেদিনীপুরের মাটি পেরুলেননা। কোলাঘাটের কাছে নিথর হয়ে গেল শরীর, দেহের ওঠা নামা নেই। আ্যম্বুলেন্সের মুখ ফিরিয়ে ফের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ। না, কলমের নিব ভেঙেই ফেললেন মৃনাল সামন্ত। আর তিনি আমাদের নাম লিখবেন না, ফর্ম ভরবেননা, ফোন করে বলবেননা, “তোমার রিন্যুয়াল শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্ত! এরপর আমাকে দোষ দিওনা।” তুমি জান, তোমাকে কেউ দোষ দেয়না, দিতে পারেনা। তবুও তোমার সেই অদ্ভুদ মুদ্রাদোষ! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের বড়বাবু কিন্তু আমাদের জন্য জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ, সবই মৃনাল সামন্ত।

কোন এক সর্বরোগ বিশারদ ডাঃ মৃনাল সামন্ত নামে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। স্ত্রী রোগ, গুপ্ত রোগ, প্রাচীন রোগ, সব সরিয়ে ফেলে। এক সহকর্মী মজা করে সেই পেপার কাটিং আঠা দিয়ে গোপনে চিটিয়ে দিয়েছে মৃনালদার আলমারির ওপর। তাঁর টেবিলে গেলেই নজরে পড়ে। মৃনালদা রাগ করেননি, তুলেও ফেলে দেননি। কুড়ি বছর ওভাবেই রয়ে গেছে। সেবার আমিও মৃনালদার সামনের চেয়ারে। সবং এলাকার একটি গ্রামীন সংবাদপত্রের এক বৃদ্ধ সম্পদক কিন্তু কিন্তু করছেন আর মৃণালদার দিকে একবার আর সেই পেপার কাটিংটার দিকে তাকাচ্ছেন। মৃনালদা হেসে বললেন, ‘আপনি বরং ওই টেবিলের ওপাশে যে বসে আছে তাঁকে গিয়ে আপনার গুপ্ত রোগটার কথা বলুন। বলুন, মৃণালদা পাঠালো।’ যার দিকে আঙুল তুলে দেখালেন, সেই মানুষটির কাছে গিয়ে বৃদ্ধ সম্পাদক তাঁর গুপ্তরোগের কথা বলেছিলেন কিনা জানা নেই। তবে রোগী আর মৃণালদার রেফার করা ডাক্তার লজ্জায় লাল হয়ে অফিস ছাড়লেন।

তখন ফ্যাক্সের যুগ। হাতে লিখে আমরা ফ্যাক্স করে খবর পাঠাই অফিসে। প্রথমে পিএন্ডটি বা পরে বিএসএনএল আমাদের কার্ড দেয়। সেই কার্ড দেখিয়ে আমরা ফ্যাক্স করি। পয়সা মেটায় অফিস। কখনও কখনও বিএসএনএলের ফ্যাক্স বিগড়ে গেলে পয়সা দিয়ে দোকান থেকে ফ্যাক্স করতে হয়। জেলার তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে ফ্যাক্স নেই। তাঁদের ফ্যাক্স আসে জেলাপরিষদে। তারপর সংস্কৃতি দপ্তরে ফ্যাক্স এল। কখনও সখনও কোনো জায়গা থেকেই ফ্যাক্স করা যাচ্ছেনা। মুশকিল আসান মৃনালদা। প্রতিবারই বলতেন, এই শেষবার। ডিআইসিও জানতে পারলে চাকরি যাবে। একসময় জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিকের ঘরটিতে এসি লাগানো হল। আমি আর হিন্দুস্তান টাইমসের কৌশিক দত্ত নেয়ে ঘেমে একাকার হয়ে অফিসে গেছি। ডিআইসিও কোনও কাজে বাইরে আছেন। মৃনালদা ডিআইসিওর চেম্বারটি খুলে এসি চালিয়ে দিয়েছেন।

অফিস ১০টা-৫টা। আজই শেষ দিন কোনও ফর্ম জমা দেওয়ার। আমরা রয়েছি গড়বেতায় কোনও রিপোর্টিংয়ে। ৬ টার আগে মেদিনীপুর ঢুকতেই পারবনা। মৃনালদা বসে রয়েছেন। সেবার সরকারি একটা প্রেস কনফারেন্স। বড়সড় লাঞ্চ প্যাকেটের সাথে ঢাউস একটা দামি ব্যাগ উপহার দেওয়া হচ্ছে। আমি আর কৌশিক সেই উপহার নিয়ে বেরিয়ে আসছি। হঠাৎই কৌশিক আমার হাতে সব দিয়ে বলল, একটু ধর, আমি আসছি। একটু পরে ফের কৌশিক আরও একটা লাঞ্চ প্যাকেট আর ব্যাগ নিয়ে হাজির। আমি বললাম, এটা কী হল? দুবার নিলি? ও হাসতে হাসতে বলল, মৃণালদার জন্য। আমরা অনেক সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারিনা রিপোর্টিংয়ের জন্য কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যদি ব্যাগ, ডায়রি, ফাইল থাকে এবং দায়িত্বে যদি তথ্য সংষ্কৃতি দপ্তর থাকে তবে আমাদের জন্য গুছিয়ে তুলে রাখতেন মৃনালদা। সেই মৃণালদার জন্য একটা ব্যাগ ম্যানেজ করতে পারবনা?

তখন লোকশিল্পীদের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান দিচ্ছে সরকার। অনুষ্ঠান বাবদ টাকা সরকারই দেন। কিন্তু নামি কিছু শিল্পীকে পছন্দসই অনুষ্ঠান দিতে হয়। তারা অনুষ্ঠানের কর্তাদের সঙ্গে গোপনে বন্দোবস্ত করেন। সরকারের দেওয়া টাকার বাইরে আলাদা করে টাকার রফা হয়। যে উদ্যোক্তারা আলাদা করে টাকা দেয় শিল্পী সেখানেই যায় নাহলে বিভিন্ন অজুহাতে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়। নামি শিল্পী কিছু বলার উপায় নেই। ভগৎ সিং জন্মশতবার্ষিকী কমিটির উদ্যোগে খড়গপুর যুব-সংস্কৃতি উৎসবের কর্মকর্তাদের অনুরোধে আমি মৃনালদাকে বললাম। তৎকালীন ডিআইসিও কৌশিক নন্দীর সঙ্গে কথা বলে একঝাঁক শিল্পী ও সংস্কৃতিদলের ব্যবস্থা করে দিলেন মৃনালদা। সঙ্গে সেইসব নামি শিল্পীদের বলে দিলেন, অনুষ্ঠানে যেতেই হবে। আলাদা করে রফার চেষ্টা করলে সরকারি তালিকা থেকেই চিরকালের মত নাম বাদ দিয়ে দেব। এই হল মৃনালদা।

শেষবার চা খাওয়া ডিআইসিও অফিসের উল্টো দিকে রেলিংয়ের ভেতর থেকে বাড়িয়ে দেওয়া বিমলদার দুটো গ্লাস। দোকান বন্ধ করার তাড়া বিমলদার। শেষ দুটো চা বাড়িয়ে দিলেন। ঝাঁপ বন্ধ। গ্লাসটা আমি নিলাম বটে, মৃণালদার রেলিং পেরিয়ে এসেও টপ করে খসে পড়ল ঠিক আজকের মতো। ঠিক যেমনটা তুমি করোনা জিতেও খসে গেলে আমাদের কাছ থেকে। সেদিনও সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। একটা চা ভাগ করে খাচ্ছি আমরা। তুমি বললে, না , আজ চলি বুঝলে। দেরি হয়ে গেলে মেয়েটা বড় রাগ করে। আমি মজা করে বললাম, শুধুই মেয়ে নাকি মেয়ের মা ও? মৃনালদা হাসলেন, সেই সর্বযুদ্ধ জয়ের সর্বজয়া হাসিটি। এতদিন তোমাকে দোষ দেয়নি কিন্তু আজ তোমাকে দোষ দিচ্ছি মৃনালদা, কেন আগেই নিলেনা ভ্যাকসিনটা? আর যদি নিজে না নিলে তবে আমাদের কেন ডেকে ডেকে নেওয়ালে? এক যাত্রায় পৃথক ফল, এটার কী খুবই দরকার ছিল?

RELATED ARTICLES

Most Popular