নিউজ ডেস্ক: করোনা আবহে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কি নেওয়া হবে? আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তরের দিকেই তাকিয়ে রাজ্যের প্রায় নয় লক্ষ দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। করোনা আবহে কি আদৌ হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা? তা হলেও কীভাবে নেওয়া হবে সেই পরীক্ষা। সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এবার কমিটি গঠন করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই কমিটির কাছে রাজ্যের যে কেউ পরামর্শ পাঠাতে পারেন বলে জানানো হয়েছে রাজ্যের বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়েছে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক মায় সাধারণ মানুষ অবধি মতামত দিতে পারেন ওই কমিটির কাছে কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি শিক্ষক বা শিক্ষক সংগঠনের কথা যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষক সংগঠনগুলি।
কী কাজ করবে এই কমিটি সে সম্পর্কে সরকার জানিয়েছে এই কমিটি মূলত তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখবে :১) করোনা আবহে ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না ?২) যদি পরিক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে কোন মাধ্যমে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে? ৩) যদি পরীক্ষা না নেওয়া হয়, তাহলে কীভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ণ করা হবে? সূত্রের খবর, উচ্চ মাধ্যমিকের ভাগ্য নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞ কমিটির উপর। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা অনলাইনে ওপেন বুক ব্যবস্থায় নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে কম নম্বরে ও কম সময়ের পরীক্ষা হবে। অনলাইনে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে। পরীক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই উত্তর লিখে হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেলের মাধ্যমে উত্তর আপলোড বা জমা দেবে। এভাবে উত্তর জমা বা আপলোড করতে না পারলে পর্ষদের তরফে সেইসব পরীক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উত্তরপত্র সংগ্রহ করা হবে।
যাইহোক কী করা উচিৎ বা কী করা উচিৎ নয় তাই নিয়েই অভিভাবক, পড়ুয়া অথবা সাধারণ মানুষ মতামত দিতে পারেন। সোমবার ২ টোর মধ্যে ইমেল করে মতামত জানাতে হবে।রবিবার রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি কোন কোন বিষয় খতিয়ে দেখেছে তা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, এই দুই পরীক্ষা নিয়ে এবার রাজ্যবাসীর মতামত নেবে সরকার। সেখানেই তিনটি মেল আইডি দেওয়া হয়েছে পরামর্শ পাঠানোর জন্য। আশ্চর্য হলেও এখানে শিক্ষক বা শিক্ষক সংগঠনগুলির কাছে মতামত চাওয়াই হয়নি। আর এখানেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকা ও তাঁদের সংগঠনগুলির মধ্যে।
বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিষ্ট্রেসস নামক প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের একটি সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে গন্ডা কয়েক শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। তাদের দুজন করে প্রতিনিধি এই এক্সপার্ট টিমে রাখতেই পারতেন। সরকার সেদিকে এগুলেন না। কেন? দ্বিতীয়ত এই নোটিশে শিক্ষক শিক্ষিকাদের কোনো উল্লেখ নেই। তার মানে আমরা ধরে নেব যে এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরামর্শ সরকারের প্রয়োজন কি নেই?” চন্দনবাবু বলেছেন, “এই নোটিশ পড়ে মনে হচ্ছে সরকার পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষেই ঝুঁকে রয়েছেন। নির্দিষ্ট কয়েকজন বিশেষ অভিভাবকের ইমেইল যাবে, কর্তৃপক্ষ সেগুলিকে সংকলন করে এক্সপার্ট কমিটি তাদের মতামত ঘোষণা করবে। আমরা এখন এই চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় রইলাম।”
অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেছেন, “মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা দপ্তর থেকে একটি নোটিশ জারি করে ইমেইল মারফত মতামত চাওয়া হয়েছে। আমরা বিস্মিত যে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে জনগণ, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী সহ অন্যান্যদের মতামত চাওয়া হলেও যাঁরা বিদ্যালয়গুলিতে এইসব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে চলেন সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন মতামত চাওয়া হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি মতামতের কোন মূল্য নেই? এটা অত্যন্ত অসম্মানজনক। রাজ্য সরকারের এই ভূমিকার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।”
এই সংগঠনটিও পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মতামত দিতে গিয়ে বলেছে,” মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সামগ্রিকভাবে কোন পরীক্ষা দেয়নি ছাত্রছাত্রীরা। তাই অফলাইনে পরীক্ষা বাদ দিয়ে কোনমতেই যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। জীবনের দুটি প্রধান পরীক্ষা ক্ষেত্রে যথার্থ মূল্যায়ন না করে যদি ঢালাও নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এই বর্ষের ছাত্র ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকগণকে আগামী দিনে মানুষের কাছে উপহাস্যের পাত্র হয়ে থাকতে হবে। ভালো-মন্দ সব একাকার হয়ে যাবে। আমরা চাই কঠোরভাবে কভিড বিধি মেনে প্রতিটি বিদ্যালয়েকে কাজে লাগিয়ে হোম সেন্টারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। ওই পরীক্ষার দিনগুলিতে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি না রেখে কেবলমাত্র পরীক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিষয়গুলিকে চালু রেখে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে হোম সেন্টারেই পরীক্ষা গ্রহণ করা হোক।”