নিউজ ডেস্ক: নেই, কোথাও কিচ্ছু নেই! বাঙালির ওল্ড দিঘা, সৈকতাবাস আর সমুদ্র এখন, এই মুহূর্তে একাকার! ঢেউ এখন আছড়ে পড়ছে আরও ৫০০মিটার উত্তরে গিয়ে বাইপাশ বা চন্দনেশ্বর যাওয়ার রাস্তায়। সৈকত সরনী এক কোমর জলের তলায়। যে ছবি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন তা বুধবার সকাল ১০টার। সমুদ্রের ওপর কারসাজি করা মানুষের কংক্রিটের যাবতীয় কৃত্তিম সৌন্দর্যবোধ গিলে নিয়েছে সমুদ্র।
মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধুই জল। নোনা জলের তলায় মানুষের বসতবাটি। এমন ভয়ঙ্কর, ভয়ানক ধ্বংস লীলা শেষ কবে দেখেছেন মানুষ, আদৌ দেখেছেন কিনা মনে করতে পারছেননা। রক্ষা একটাই, লক্ষ লক্ষ মানুষকে আগের রাতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তেমন প্রাণহানি হয়নি কিন্তু শেষ হয়ে গেছে বাঙালির সান্ধ্যকালীন সেই মনোহরি পশরার দোকানপাট।
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ওড়িশার ধামড়া ও বালেশ্বরের মাঝে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ স্থলভাগ স্পর্শ করতে শুরু করে ইয়াস। তিন ঘন্টা ধরে চলবে এই ল্যান্ডফল, এমনটাই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। এদিকে ইয়াসের প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে বঙ্গেও। দিঘায় উত্তাল হয়ে রিয়েছে সমুদ্র। জলস্তর বেড়ে গিয়েছে ব্যাপক হারে। শহরের বুকে ঢুকছে জল।
স্থানীয়দের দাবী, দিঘায় সমুদ্রের এমন ভয়ঙ্কর রূপ তারা আগে দেখেছেন বলে মনে নেই। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে আটটা নাগাদ গার্ডওয়াল টপকে দিঘা শহরে জল ঢুকতে শুরু করে। কার্যত জলের তলায় ঢুবে যায় আশপাশের দোকানগুলো। জলে ভাসছে মোটরবাইক। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বোল্ডার টপকে রাস্তায় চলে আসছে ঢেউ। প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে, সঙ্গে বৃষ্টি।
আগেই দিঘা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দা ও স্থানীয় হোটেল থেকে সমস্ত কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। ঝোড়ো হাওয়ার দাপট দেখা যায় দিঘার কাছে রামনগর ২ নম্বর ব্লকের সতিলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১১৬-র বি জাতীয় সড়কে গাছ উপড়ে বিপত্তি। দ্রুত এলাকায় পৌঁছে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে এনডিআরএফ।
এদিকে জল ঢুকছে মন্দারমণিতে। প্লাবিত হয়েছে তাজপুরও। একইসঙ্গে মন্দারমণির হোটেলেও ঢুকেছে জল। জল ঢুকছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলিতে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা সম্পূর্ণ খালি করতে কোমর বেধে নেমেছে প্রশাসন। রাস্তা টপকে গ্রামগুলোতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়ির চাল। বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাশাপাশি হলদিয়াতেও পড়েছে ইয়াসের প্রভাব। হলদি নদীতেও জলস্তর বৃদ্ধি হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যেতেই সেখানে নামানো হয়েছে সেনা। জল ঢুকতে শুরু করেছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। বাঁধ ভেঙে নদী তীরবর্তী এলাকায় জল ঢোকার আশঙ্কা। দোকান বেঁধে রাখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে ভেঙেছে ৫১টি বাঁধ।
সেইসঙ্গেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয় বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। এদিকে কড়া সতর্কবার্তা রূপনারায়ন, কাঁসাই, সুবর্ণরেখায়। বন্যায় ভাসতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তৃত এলাকা। ঘাটাল মহকুমা ছাড়াও সবং, পিংলায় বন্যা বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। দাঁতন ও কেশিয়াড়ীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্রে।