নিজস্ব সংবাদদাতা: নির্বাচনের পর থেকেই হিংসায় উত্তপ্ত বাংলা। হিংসার অভিযোগ তৃনমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই। দেখা যাচ্ছে যেখানে যারা শক্তিশালী তারাই সেখানে হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে। দক্ষিণে যেমন তৃণমূল, উত্তরে তেমন অভিযোগ আসছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এখনও অবধি হিংসার বলি ১৯জন। প্রচুর ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সব হারানোর হাহাকারে দীর্ন বাংলা। আর এরই মধ্যে চলছে গুজব ও মিথ্যা ঘটনা, ছবি ইত্যাদি ছড়িয়ে হিংসাকে স্থায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা যেখানে প্রধান অভিযুক্ত বিজেপি এবং তার সহযোগী কিছু সংগঠন। সম্প্রতি এরকমই এক মিথ্যাচার ফাঁস হয়ে গেল বঙ্গ বিজেপিরই একটি ফেসবুক ও ট্যুইটার থেকে যেখানে এক জীবিত সাংবাদিকের ছবি পোষ্ট করে তাকে মৃত ও দলীয় কর্মী বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই সাংবাদিকের পাল্টা পোষ্ট ও বিবৃতির মুখে নিজেদের পোষ্ট ডিলিট করে নিয়েছে বিজেপি।
না তো তিনি মৃত, আর না তো তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক। তবুও তাকেই শীতল্কুচিতে তৃণমূলের হিংসার কারণে মৃত দেখিয়ে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে তুলে ধরা প্রচেষ্টা করল গেরুয়া শিবির। আর যাকে তারা মৃত দলীয় কর্মী বলে দাবী করেছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ইন্ডিয়া টুডে’র সাংবাদিক অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপি তাদের ফেসবুক ও ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে। সেখানে ইন্ডিয়া টুডে’র সাংবাদিক অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিকে শীতলকুচিতে নিহত দলীয় কর্মী মানিক মৈত্রের ছবি বলে দাবী করে। তাদের অভিযোগ, ভোটের ফলাফল বেরোনোর পরের দিন অর্থাৎ ৩রা মে মানিক মৈত্র নামে এক কর্মীকে হত্যা করেছে তৃণমূল। তাঁর নাম নিয়ে ওই সাংবাদিকের ছবি দিয়ে ভিডিও পোস্ট করে বিজেপি।
সেই ভিডিও দেখেন অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানান, ‘আমি মানিক মৈত্র নয়, এই ভিডিওর ক্যাপশনে সেটা বলা হয়েছে। আমি জীবিত এবং সুস্থ আছি।’ সাংবাদিক আরও লেখেন, “আমি শীতলকুচি থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে বহাল তবিয়তে আছি। বিজেপির আইটি সেল এখন দাবী করছে যে, আমি মানিক মৈত্র এবং আমি শীতলকুচিতে মারা গিয়েছি। দয়া করে এই ভুয়ো পোস্টগুলিকে বিশ্বাস করবেন না আর দুঃশ্চিন্তাও করবেন না। আমি আবার বলছি, আমি এখনও জীবিত।”
আসলে, ৫ই মে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা তাদের ফেসবুক ও ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে, রাজ্যজুড়ে বিজেপি সমর্থকদের ওপর তৃণমূলের হামলার অভিযোগ এনে ভিডিও পোস্ট করে, যার মধ্যে ছিল সাংবাদিকের ছবি। আর স্বাভাবিক ভাবেই ভিডিও হয়ে যায় ভাইরাল। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল বেলা উঠে ওই সাংবাদিক দেখেন যে তাঁর কাছে ১০০টি’র বেশি ফোন এসেছে। রাতে তিনি ঘুমানোর জন্য ফোন ধরতে পারেনি। এত মিস কল দেখে তিনি চমকে যান। এরপর তার আরও এক সহকর্মী তাকে আবারও ফোন করে বিষয়টি জানান। তারপরেই ভিডিও নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্টটি করেন সাংবাদিক। এরপরেই নিজেদের ভুল মেনে নিয়ে ঐ ভিডিও তাদের ফেসবুক ও ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে তুলে নেয় বিজেপি।
প্রসঙ্গত ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবারই রাজ্যে আসে কেন্দ্রের ৪ প্রতিনিধিদের একটি দল। এই ঘটনা নিয়ে অবশ্য বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন, ভ্যাকসিন নেই তখন কেন কেন্দ্রীয় দল আসে না? দিল্লির দাঙ্গার পর কেন্দ্রীয় দল আসে না।‘ সেইসঙ্গেই এদিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বলেন, ‘কমিশনের অধীনে আইনশৃঙ্খলা থাকাকালীন ১৬-১৭জনের মৃত্যু হয়েছে। আট জন বিজেপির, আট জন আমাদের। একজন সংযুক্ত মোর্চার। আমরা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য ২লক্ষ টাকা করে ঘোষণা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় বন্ধ মিটিং-মিছিল, তাও কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বাংলায়? ভোট পরবর্তী হিংসা না হওয়ার জন্য শান্তির বার্তা দিয়েছি। সংযত হোক বিজেপি, মানুষের রায় মেনে নিন।’