নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যে অব্যাহত ভোট পরবর্তী হিংসা। পিছিয়ে নেই উত্তরের দুই জেলা আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারও। দুই জেলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত ২। এদের মধ্যে একজন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বুথ সভাপতি দীপক রায় এবং অন্যজন তৃণমূলের সক্রিয় এক কর্মী, নাম শাহিনুর রহমান। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন তৃণমূল কর্মী।
জানা যায়, আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান থেকে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন আলিপুরদুয়ার ১ নং ব্লক এর মথুরা এলাকার বাসিন্দা দীপক রায় (৩৮)। তার সঙ্গে আরোও ২-৩ জন বন্ধুও তার গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন বলে তৃণমূলের দাবী। দীপক রায় এলাকার ১২/৪৪ নং বুথের তৃণমূলের বুথ সভাপতি পদে নিযুক্ত ছিলেন ও যুব তৃণমূলের দায়িত্বেও ছিলেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার পথে সোনাপুর এলাকায় দীপক রায়ের গাড়ি আটকায় একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তার গাড়ির উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে ওই দুষ্কৃতীরা। কোনও মতে প্রাণে বেঁচে পালায় সঙ্গে থাকা অন্যান্য সঙ্গীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এলাকার তৃণমূলের অন্যান্য কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দীপক রায়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। তার মুখের অংশে বেশ কিছু ধারালো অস্ত্রের আঘাত লক্ষ করা যায়। তড়িঘড়ি দীপককে উদ্ধার করে বাবুরহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ। বিদ্ধস্ত গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দীপক রায়কে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। দোষীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। এদিকে আলিপুরদুয়ার বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে, সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহার। তৃণমুলের সক্রিয় কর্মীকে বেঁধে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরে তার দেহ ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম শাহিনুর রহমান। গুরুতর আহত আরও এক তৃণমূল কর্মী কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত ব্যক্তির নাম প্রসেনজিত সাহা। অভিযোগের তীর বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। বুধবার সকালে তুফানগঞ্জ মহকুমার নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের চিলাখানা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইউনিয়ন ক্লাবের পেছনে ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার হয় মৃত শাহিনুর রহমানের দেহ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত গোটা এলাকা। খবর পেয়ে তুফানগঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার সকালে রক্তাক্ত, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রহমানের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
পাশাপাশি বুধবার সকালে কোচবিহার জেলা দিনহাটা বিধানসভার অন্তর্গত ১নং ব্লকের শিঙিজানি এলাকায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি টিপেন দেবনাথকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এমতাবস্থায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে। সকলকে আশ্বস্ত করতে ও ঘটনার বিবরণ জানিয়ে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশ সুপার দেবাশিষ ধর। তিনি জানান, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় মোতায়ন রয়েছে পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও অতিরিক্ত ১৫০ জন পুলিশ। রাজনৈতিক এই সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে এখনও পর্যন্ত ৩৪ জন।‘ তিনি আরও জানান, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন থানার এলাকা ভাগ করে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। রুট মাচ বাড়ানো হয়েছে। কিছু ঘটনার যেমন সত্যতা রয়েছে। তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভ্রান্ত খবরও ছড়ানো হয়েছে। কারা এই কাজ করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি রাজ্যও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।