শশাঙ্ক প্রধান : সোমবার দুপুরে নিজেরই ঘরে ধর্ষিতা হয়ে খুন হতে হয়েছে এক কলেজ ছাত্রীকে। ধর্ষণ করার পর তারই পরনের নাইটি দিয়ে বাড়ির কড়িকাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২০বছর বয়সী কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের সেই ছাত্রীর সেই মর্মান্তিক পরিনতির জানাজানি হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে জামনা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বালিচক-সবং রাজ্য সড়ক অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ। ‘প্রকৃত’ দোষিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে স্থানীয় তৃনমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা। তাঁরা দাবি করেছেন পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত করতে হবে। গ্রেপ্তার করতে হবে ‘প্রকৃত’ দোষিদের।
যদিও পুলিশ এই ঘটনায় মেয়েটির বাড়িতে কর্মরত একজন রাজমিস্ত্রি এবং তার এক পুরুষ ও মহিলা সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও তৃনমূলের স্থানীয় নেতা শিবু দাস দাবি করেছেন, ‘পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঠিকই কিন্তু আমাদের কাছে খবর রয়েছে আরও একাধিক ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত যাঁদেরকে ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই মোটরবাইক নিয়ে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। তারা কারা পুলিশ সেটা খুঁজে বের করুক।”
এদিন এই অবরোধের পাশাপাশি অবরোধে সামিল হয়েছেন নিহত ছাত্রী যে কলেজে পড়তেন সেই ডেবরা ক্ষুদিরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এঁদের বেশিরভাগটাই নির্যাতিতা ছাত্রীর সহপাঠী ও সহপাঠিনী। করোনার ফলে কলেজ এক বছরের কাছাকাছি বন্ধ থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধমে এই খবর জানতে পেরেই নিজেদের উদ্যোগে জড়ো হয়েছেন জামনা এলাকায়। পথ অবরোধে সামিল হয়েছেন তাঁরাও। হাতের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘ ওই ওয়ান্ট জাস্টিস বা জাস্টিস ফর অমুক’ আওয়াজ তুলে অবরোধ শুরু করেছেন তাঁরা।
ঘটনায় অবশ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে ওই বাড়িতে কর্মরত এক রাজ মিস্ত্রি ও তার সহযোগীকে। উল্লেখ্য ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবারের একটি মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ইটের গাঁথনি দেওয়া হচ্ছিল। এই কাজে নিযুক্ত ছিল এই তিনজন। এই তিনজনের একজন রাজমিস্ত্রি যার নাম বিকাশ মুর্মু, বাড়ি বেলদা থানা এলাকার ময়নাপাড়াতে। অন্যজন বিকাশের পুরুষ সহযোগী ছোটু মুন্ডা। এর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পূর্বসিংভূম জেলার গুড়বান্দা থানা এলাকায়। যদিও অস্থায়ী ভাবে সে তেমাথানি এলাকাতেই থাকত।
ঘটনায় বিকাশের মহিলা সহযোগীর নামে ছাত্রীর বাড়ির লোকেরা অভিযোগ করলেও পুলিশ আপাতত তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। বিবাহিতা তেমাথানির বাসিন্দা ওই মহিলার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতা ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে এই তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করা হয়েছে এই তিনজনই গোটা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। বাইরের কেউ এসে এই ঘটনা ঘটায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ স্নিফার ডগ বা কুকুর নিয়ে তদন্ত চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় ঘুরে পুলিশ কুকুর। যদিও এখনও অবধি ওই তিনজনের বাইরে ঘটনস্থলে কারও উপস্থিতি ছিল এমন প্রমান পুলিশ পায়নি বলেই জানা গেছে। এদিকে প্রায় ৫ঘন্টা অবরোধ চলার পুলিশের আধিকারিকরা দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে এই আশ্বাস দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করান।
অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, “‘ তদন্ত ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাই ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকারকে এতটাই প্রলম্বিত করে যে ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি হতে হতে বিষয়টি জনমানস থেকে হারিয়ে যায়। এই ধরনের জঘন্যতম অপরাধের অতিদ্রুত তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি করছি আমরা।” অধিকারী বলেন, “ডেবরা থানা সহ পাশাপাশি এলাকায় এমন বহু ঘটনা ঘটে চলেছে মাঝে মধ্যেই। কিন্তু ঘটনা ঘটে যাওয়ার কিছুদিন পর এসব ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। ঘটনার পর কিছু জন গ্রেফতার হয় কিন্তু অপরাধীরা কেউই যথাযথ শাস্তি পাচ্ছে না। দুষ্কৃতীরা সাহস পেয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ নিক। বিচারে দ্রুত শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হোন।”