নিউজ ডেস্ক: অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস নিতে না পেরে আবারও ৮জন করোনা রোগীর মৃত্যু হল দিল্লির বাটরা হাসপাতালে। “মানুষ শ্বাস নিতে পারছে না, অক্সিজেন কোথায়? আপনারা কি বলতে চাইছেন যে দিল্লিতে মানুষ মারা যাচ্ছেন, আর আমরা চোখ বন্ধ করে থাকব?” দিল্লির বাটরা হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এইভাবেই কেন্দ্রকে বিঁধল দিল্লি হাইকোর্ট।
শনিবার দিল্লির বাটরা হাসপাতালে ৮ জন করোনা রোগীর মৃত্যু। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালেরই একজন ১ জন প্রবীণ চিকিৎসক। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা বারবার দিল্লি সরকারের কাছে জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের কাছে আর কিছু ঘন্টারই অক্সিজেন বেঁচে রয়েছে। কিন্তু অক্সিজেনের কোন ব্যবস্থা হয়নি। এই ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া ভাষায় দিল্লি হাইকোর্টের প্রশ্ন ‘আপনারা কি বলতে চাইছেন যে দিল্লিতে মানুষ মারা যাচ্ছেন, আর আমরা চোখ বন্ধ করে থাকব? বিচারপতি বিপিন সাংঘি এবং বিচারপতি রেখা পাল্লির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আমরা কাজ বলতে চাইছি। মাথার উপরে জল চলে গিয়েছে।’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার থেকে এর আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে দিল্লিতে ৪৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেন বন্টন করা হবে। এই কাজ এখনও কেন হয়নি এই নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করেছে আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সোমবার।
উল্লেখ্য, শনিবার বাটরা হাসপাতালে ৮ জন রোগীর মৃত্যুর পরেই হাইকোর্টে অক্সিজেন নিয়ে এই মামলার শুনানি হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, যে সংস্থার থেকে অক্সিজেন পাওয়ার কথা ছিল, তাদের থেকে অক্সিজেন মেলেনি। সকাল সাতটা নাগাদ তা সরকার-নিযুক্ত আধিকারিকদের জানানো হয়। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। বেলা প্রায় সাড়ে ১২ টা নাগাদ হাসপাতাল পুরোপুরি অক্সিজেনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল বলেও হাসপাতালের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এদিনের এই ঘটনার কিছুদিন আগেই দিল্লীর বেসরকারি জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারান ২০ জন করোনা রোগী। এর কিছু সময়ের ব্যবধানেই আরও ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এই ঘটনার একদিন আগেই অক্সিজেনের অভাবে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ২৫ জন এইভাবেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও অক্সিজেন নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের তপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। অক্সিজেনের অভাব নিয়ে মহারাজা অগ্রসেন ও বাটরা হাসপাতালে দায়ের করা মামলার শুনানিতে গত শনিবার দিল্লি হাইকোর্ট কড়া বার্তা দিয়ে বলে, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে গাফিলতি দেখলে কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় স্তরের কোনও অফিসারকেই ছেড়ে কথা বলা হবে না। অক্সিজেন সরবরাহে কারা বাধা দিচ্ছে, একবার বলুক দিল্লি সরকার। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের ফাঁসিতেও ঝোলানো হবে।‘ এক সপ্তাহ না পেরোতেই আবারও দিল্লি হাইকোর্টয়ের তোপের মুখে পড়তে হল কেন্দ্রকে।
তবে হাইকোর্টের কেন্দ্রকে তোপ দাগার আগেই এদিন দুর্গাপুর থেকে ৬ টি অক্সিজেন কন্টেনার নিয়ে দিল্লি ছোটে অক্সিজেন এক্সপ্রেস। দিল্লিতে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে দুর্গাপুর থেকে অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালানোর কথা ভাবছে রেল, একথা সাংবাদিক সম্মেলন করে এপ্রিলের ২৫ তারিখই জানিয়েছিলেন, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীত শর্মা। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই শনিবার দুর্গাপুর স্টিল অথরিটির কারখানা থেকে ৬টি কন্টেনারে ১২০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয় সগরভাঙা জোনাল সেন্টারে রেল মন্ত্রকের কন্টেনার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার ইয়ার্ডে। সেখান থেকে অক্সিজেন এক্সপ্রেস রওনা দেয় দিল্লির উদ্দেশ্যে। কন্টেনারগুলির আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধিকারিক। ছিলেন কন্টেনার কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরাও।