নিউজ ডেস্ক: জামাইকে অতিরিক্ত খরচ করতে বাধা দেওয়ায় শ্বশুরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ জামাইয়ের। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি তিনি। অভিযুক্ত জামাইয়ের নাম পাপ্পু দাস। আক্রান্ত শ্বশুরের নাম সঞ্জয় দাস, তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কর্মী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আট বছর আগে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের বাসিন্দা মহিলা ললিতা দাসের মেয়ে রানির সঙ্গে ঐ এলাকারই বাসিন্দা পাপ্পু দাসের বিয়ে হয়। তাদের তিন ছেলে রয়েছে। ছোট ছেলের বয়স সাত মাস। প্রথমে রাজা রামমোহন রায় সরণির একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে জামাই তাঁর মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করে। মহিলার অভিযোগ, তার জামাই পাপ্পু বিশেষ কোনও কাজ করে না। সারাদিনই নেশা করে থাকে। এই ব্যাপারে তাঁর মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের প্রায় প্রতিদিনই গণ্ডগোল লেগে থাকত। সময় মতো ভাড়া না দেওয়ায় বাড়িওয়ালার সঙ্গেও গোলমাল হয়।
এরপর স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে কলকাতা ছেড়ে গিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভাড়া থাকতে শুরু করে সে। কিন্তু সেখানেও পাপ্পু একই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। ভাড়া না দেওয়ায় সেখানেও বাড়িওয়ালার সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। তখন শ্বশুর ও শাশুড়ি জামাইকে বোঝান, সে যেন নেশার পেছনে টাকা খরচ না করে ছেলেদের জন্য খরচ করে। কিন্তু জামাই তো আর কথা শোনার পাত্র নন। এক সপ্তাহ আগে ললিতা দাসের মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের ফের গোলমাল হয়। তারই জেরে স্ত্রী ও তিন ছেলেকে পাপ্পু শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসে। এই ব্যাপারে শ্বশুর ও শাশুড়ি জামাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জামাই সেই একই জায়গায় আটকে।
ললিতা দাসের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে তাঁর স্বামী বাড়িতে বসে খাচ্ছিলেন। হঠাৎই জামাই ঘরের ভিতর ঢুকে যায়। শ্বশুরের সঙ্গে বচসা শুরু হয় জামাইয়ের। শ্বশুরকে খুনের হুমকি দিতে থাকে জামাই। হঠাৎই সে ছুরি বের করে শ্বশুরের গলায় ধরে। স্বামীকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে যান। তখনই স্বামী সঞ্জয়ের গলা ছুরি দিয়ে কেটে দেয় জামাই। ওই ব্যক্তির গলা থেকে রক্তপাত হতে শুরু করে। জামাই রক্তাক্ত অবস্থায় শ্বশুরকে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে এবং আবারও তাঁর গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে সে। ললিতা চিৎকার করে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বেগতিক বুঝে পালিয়ে যায় জামাই পাপ্পু। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালেরই কর্মী তিনি। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
এই ঘটনায় ললিতা দেবী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পর তদন্ত শুরু হয়। শাশুড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে পলাতক জামাই পাপ্পু দাসকে গ্রেপ্তার করে উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। রবিবার পাপ্পুকে ব্যাংকশাল আদালতে তোলা হলে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে নেশা গ্রস্থ জামাইকে বাধা দিতে গিয়ে যে জমের দুয়ারে পৌঁছে যাবেন, সেকথা হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি সঞ্জয়।