নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও সেই শিকার উৎসব আবারও নির্বিচার পশুপাখি হত্যায় কলঙ্কিত হল জঙ্গল। কয়েক’শ বন্যপ্রাণী হত্যা হল একদিনেই। শত শত মানুষের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে কার্যত অসহায় হয়ে থাকতে হল বনদপ্তর। সামান্য কিছু বনকর্মী আর গুটি কয়েক পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন নির্বিচার এই হত্যালীলা। কয়েকশ পশুপাখি হত্যার রক্তে সিঞ্চিত হল মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন কঙ্কাবতী সহ আশেপাশের জঙ্গল এলাকা। শনিবার সকাল থেকেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ জন মিনিট্রাক, ট্রাক্টর, টেম্পো ইত্যাদি ভাড়া করে জড়ো হয়েছিলেন শিকার উৎসব। তাঁদের প্রথা অনুযায়ী বাংলা মাসের আজকের দিনে অর্থাৎ ২০ শে চৈত্র এই কঙ্কাবতী ও সংলগ্ন বনাঞ্চলে শিকারের দিন। শিকার চলল সকাল থেকে মোটামুটি দিনের আলো থাকা অবধি।
সেই মত শিকারে অংশ নেওয়া মানুষেরা তাঁদের প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র যেমন তির ধনুক, টাঙি,বল্লম, বর্ষা,সড়কি ইত্যাদি নিয়ে দলে দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়েন গভীর জঙ্গলে। সমবেত মানুষের সিঙ্ঘনাদে যখন প্রাণভয়ে নিরীহ পশুপাখির দল ছুটে পালাতে ব্যস্ত তখনই সমবেত অস্ত্র সহযোগে শুরু হয়ে যায় পশুবধ। শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে স্থানীয় জামশোল নামক জায়গায় যে শিকারিদের দলগুলি ফেরত এসেছিল তখনই তাঁদের কাছে গোটা আটেক বন্যশুকর যার দুটি প্রায় ১০০ কিলোর উপরে, কয়েক ডজন ভাম, ম্যাকরোল ইত্যাদি বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী, প্রচুর খরগোশ, নেউল ইত্যাদি রয়েছে। তখনও অর্ধেকেরও শিকারি জঙ্গলে ব্যস্ত রয়েছেন শিকারে। সুতরাং খুব সহজেই অনুমেয় যে দিনের শেষে কী পরিমাণ পশুপাখি শিকার করা হতে পারে!
জানা গেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝাড়গ্রাম জেলার দহিজুড়ি, বিনপুর, বাঁকুড়া জেলার রাইপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এঁরা এসেছিলেন। ফের কিছুদিনের মধ্যে চাঁদড়া, গুড়গুড়িপালের জঙ্গলে শিকারের দিন রয়েছে। শিকারিদের একাংশ জানিয়েছেন এই শিকার উৎসব তাঁদের ঐতিহ্যের অংশ। বাবা ঠাকুর্দার আমলের প্রথা মেনেই তাঁরা এটা করে থাকেন। অনেক সময় হয়ত শিকার মেলেইনা তবুও এঁরা উৎসবের অঙ্গ হিসাবেই নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে থাকেন সেই চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই। যদিও যে সময় এই শিকারের উপযোগিতা ছিল সেই সময় আর এই বিকল্প আয়ের উৎস থাকা স্বত্ত্বেও আজকের দিনে এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যায় বিশেষ করে বিভিন্ন কারনে যখন বেশকিছু প্রাণী পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই শিকারের ফলে জঙ্গলের জীব বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু একে নিবৃত্ত করার প্রয়োজনীয় লোকবল তাঁদের নেই। তাছাড়া বল প্রয়োগ করে এ জিনিস বন্ধ করা যাবেনা তাতে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। তবে বনদপ্তর যদিওএকে ব্যর্থতা বলতে নারাজ। তাদের মতে দীর্ঘদিনের এই প্রথা বন্ধ করতে সময় লাগবে এবং সেই প্রক্রিয়া চলছে।মেদিনীপুর বনবিভাগের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘ বিভিন্ন সময় সচেতনতা শিবির, সম্প্রদায়ের সামাজিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা ইত্যাদি করে এই শিকার উৎসবকে যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও তার ফলাফল যে সুখপ্রদ নয় তা শনিবার টের পাওয়া গেছে।