নিজস্ব সংবাদদাতা: খোদ মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ফোন করে বিজেপি নেতাকে বলছেন যে এবার নন্দীগ্রামে আমার হয়ে একটু কাজ করে দাও ভাই। ভাইরাল হওয়া এমনই একটি অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সারা রাজ্য জুড়ে আর তাই থেকে বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন যে মমতা ব্যানার্জী নিজেই বুঝতে পেরে গেছেন যে নন্দীগ্রামের তিনি জয়ী হতে পারছেন না। আর সে কারণেই বিজেপি নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এই অডিওটির সত্যতা যাচাই দ্য খড়গপুর পোষ্টের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখে লাখে ভিউয়ার্স হওয়া প্রায় ৩ মিনিটের কথাবার্তায় মহিলা কন্ঠটি প্রাথমিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বলেই মনে হয়েছে।
গলার স্বর এবং বাচনভঙ্গি প্রায় ১০০শতাংশই মিলে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যদিও উন্নত প্রযুক্তির যুগে তাতেই নিশ্চিত করে বলা যায়না যে ওই গলা মুখ্যমন্ত্রীরই। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি তথা নন্দীগ্রামের এই বিজেপি নেতার নাম প্রলয় পাল। যাঁর বাড়ি নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে। একদা তৃনমূলের সক্রিয় কর্মী প্রলয় শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ করার পরপরই বিজেপিতে যোগ দেন। অডিওতে শোনা যাচ্ছে সেই প্রলয়ের সঙ্গেই কথোপকথন হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর মতই মহিলা কন্ঠে।
মুখ্যমন্ত্রীর গলায় বলা হচ্ছে, ‘তুমি তো অনেক ইয়াং ছেলে এবং অনেক কাজ কর। আমি জানি সব কিছু। এবার একটু আমাদের সাহায্য করে দাওনা। দেখবে কোনও অসুবিধা হবেনা।” প্রলয় পাল বলেন, ” আপনাকে দেখে আমাদের পরিবার রাজনীতিতে এসেছিল।”
মুখ্যমন্ত্রীর কন্ঠ, ‘জানি সব কিছুই।’ প্রলয় পাল, ‘ ২০১১ সালে রেজাল্ট বেরুনোর পর যখন বুঝতে পারি আপনি ক্ষমতায় আসছেন। তখন ৫ জন ব্রাহ্মণ ডেকে হোম-যজ্ঞ করে মিছিল মিটিং করেছিলাম। কিন্তু খারাপ লাগে দিদি যখন এত ত্যাগ করার পরও যখন প্রলয় পাল রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পায়না।এর থেকে লজ্জার কিছু থাকতে পারেনা।’
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘এটা কে করেছিল? তুমি জানো তোমাদের লোক্যাল যে লিডার ছিল সে আমাদের নন্দীগ্রামে যেতে দিতনা এবং সে আমাকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দিতনা, সারা মেদিনীপুরে ঢুকতে দিতনা। তাদের একটা জমিদারি চলত। তুমি তো জানো সবই ভাই….”
প্রলয় পাল, ‘দিদি আমি রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পাবনা, এটা হতে পারে?’
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘আরে আমি আছি কী করতে? এটা তো যে করেছে সে অন্যায় করেছে।’
প্রলয় পাল, ‘আমি তো মার খেয়েছি। আপনার মহাদেবের হাতে মার খেয়েছি।’
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘আমি জানি, আমি সব জানি। আমি পরে শুনেছি। আমি তো আগে এত ডিটেলসে খবর নিতাম না। কিন্তু এখন যেহেতু আমি গেছি। তাই সবার খবর রাখছি বলেই বলছি।’
প্রলয় পাল, ‘আর দিদি এখন আপনি যাই মনে করুন না কেন বেরিয়ে এসেছি দল থেকে। আর এখন যে দলটাই করিনা কেন সেই দলের সাথে আমি বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারবনা। আমি প্রাণ দিয়ে, জীবন দিয়ে যে দলটা করি বা আমার পরিবার করে সেটাই করি। আমার পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি বা দুনম্বরির অভিযোগ কারুর ছিলনা, এখনো হবেনা, ভবিষ্যতেও থাকবেনা।”
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘ সব ঠিকই আছে কিন্তু তুমি আমাকে বল যাদের জন্য করছ তারা তো কখনও বিজেপি করেনি। এখন যারা করছে তাদের কী তুমি বিশ্বাস কর যে, তারা অনেস্ট? তুমি কী বিশ্বাস কর যে, তারা মানুষের কাজ করছে?”
প্রলয় পাল, ‘ যতদিন দল ঠিক পথে থাকবে ততদিন দলের সঙ্গে থাকব।আমাকে বিবেক জন্ম দিয়েছে, দল জন্ম দেয়নি তো? আমার সঙ্গে যখন অন্যায় হবে আমি কেন মানতে যাব? ”
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘না, সেটাই তো আমি বলছি। তারমানে যে (শুভেন্দু অধিকারী) তোমাদের ওখানে লড়ছে সে কী তোমাদের কাছে সৎ?”
প্রলয় পাল, ‘ না, উনি ওই পরিবারের(অধিকারী পরিবার) সন্তান। আমরা যখন সিপিএমের কাছে অত্যাচারিত হতাম তখন ওই পরিবার পাশে ছিল। আমি এই জায়গা থেকেই ওই পরিবারকে সাপোর্ট করি,দীর্ঘদিন ধরে। শিশির বাবুর (শিশির অধিকারী) সঙ্গে বাবার ৪০বছরের সম্পর্ক। যেদিন সিপিএম দ্বারা অত্যাচারিত হত সেদিন ওদের ওই পরিবারের কাছে আমার পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিতাম। সেদিন আমাদের পাশে আর কেউ ছিলনা।”
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘সেদিন ওরা আমাদের সাথে ছিল বলেই আমাদের হয়ে ওরা করত। সেদিন আমরাই তো সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইটা করতাম।”
প্রলয় পাল, ‘দিদি বলি শুনুন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে ফোন করার জন্য।মানে আপনি এত বড় নেতৃত্ব হওয়া স্বত্ত্বেও একজন সাধারন কর্মীকে ফোন করেছেন এরজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। দিদি, আমাকে ক্ষমা করবেন।”
মুখ্যমন্ত্রী কন্ঠ, ‘তবুও ভেবে দেখ!’
প্রলয় পাল, ‘আচ্ছা’
মুখ্যমন্ত্রী, ‘ভালো থেকো।’
২মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের এই অডিও আগুনের মত নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়িয়ে হু হু করে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা রাজ্য জুড়ে। আর এই অডিওকে সামনে রেখেই বিজেপি নেতৃত্ব
প্রচার শুরু করেছেন যে, নন্দীগ্রামে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা কর্মীদের কাছে আবেদন করে বেড়াচ্ছেন তাঁকে জেতানোর জন্য।