নিজস্ব সংবাদদাতা: নজির বিহীন সিদ্ধান্ত নিলেন নির্বাচন কমিশন। ভোটের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে সরিয়ে দেওয়া হল ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানীকে একই সাথে প্রথম দফার ভোটগ্রহণে
দুদিন আগে বদলি করা হয়েছে পুলিশের ৪জন শীর্ষকর্তাকেও। ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। কমিশনকে ফের পক্ষপাতদুষ্ট বলে ‘বিজেপির খুড়তুতো ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক পদ থেকে আয়েশা রানিকে সরানো হচ্ছে। তাঁর জায়গায় সেই পদে আসছেন জয়সী দাসগুপ্ত। আয়েশা রানিকে মুখ্যসচিবের দফতরে পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুখ্যসচিবের দপ্তরেই সংযুক্ত থাকবেন। পাশাপাশি, এডিজি পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব থেকে আইপিএস অফিসার সঞ্জয় সিংকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে আইপিএস রাজেশ কুমারকে। ডায়মন্ডহারবার পুলিস সুপারের পদ থেকে আইপিএস অফিসার অভিজিৎ ব্যানার্জিকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে আইপিএস অরিজিৎ সিনহাকে। আইপিএস অফিসার কে কান্ননকেও কোচবিহারের পুলিস সুপারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আনা হয়েছে আইপিএস দেবাশিষ ধরকে।
এরই সাথে এদিন ডিসি সাউথের পদ থেকে নীলকান্ত সুধীরকেও সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে আকাশ মাঘারিয়াকে। বিজ্ঞপ্তি জারি করে বদলির কথা ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে যে, ভোট না চুকে যাওয়া অবধি পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও পদে বদলি হওয়া অফিসারদের বহাল করা যাবে না। প্রসঙ্গত, গতকালই রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরানো হয়েছে সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে।
এদিকে এদিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে নির্বাচনী সভায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর পাওয়ার পরই সেই দাঁতনের সভা থেকে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে কটাক্ষ করলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই সভা থেকে নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র কমিশনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে কমিশনকে বিজেপি-র ‘খুড়তুতো ভাই’ বলেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার দাঁতনে বলেন, ‘‘আমরা একদিকে কষ্ট করে মিটিং করছি, মানুষ কষ্ট করে আসছেন, আর অন্য দিকে বিজেপি দলটা নির্বাচন কমিশনকে এমন ভাবে প্রভাবিত করছে, যেন মনে হচ্ছে ওটা বিজেপি-র কমিশনে পরিণত হয়েছে। কমিশন এখন বিজেপি-র খুড়তুতো ভাই। আমি হেলিকপ্টারে আসতে আসতে শুনলাম, বিজেপি-র কথা মতো আরও কয়েকটা ডিএম, এসপি বদলে দিয়েছে। আমি বলি সবটা বদলে দাও। তাতেও কোন লাভ নেই। বিজেপি-কে জেতাতে পারবে না। কারণ যাদের বদলাচ্ছ, তারাও আমাদের লোক। যাদের নিয়ে আসছ তারা আরও বেশি করে আমাদের লোক।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া ভাষায় বলেন ‘‘বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনারা বিমাতৃসুলভ মনোভাব দেখাচ্ছেন। এটা আপনাদের কাছ থেকে আশা করি না। বিজেপি যেমন একটা পলিটিক্যাল পার্টি, আমরাও একটা পলিটিক্যাল পার্টি। আপনারা যদি মনে করেন সব রিজিওনাল পার্টিগুলোকে খতম করবেন, তা হলে বলে রাখি ভুল করছেন। বাংলায় এর রেজাল্ট পাল্টা হবে। এর জন্য আপনি আমাকে শো-কজ করতে পারেন। দশটা চিঠি দিতে পারেন। আমার কোনও যায় আসে না।’’
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন আয়েশা রানী। তারপরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান বিজেপি নেতা তথা তৎকালীন তৃনমূল নেতা জঙ্গলমহলের দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু অধিকারী পরবর্তীকালে দাবি করেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। এমনকি ঝাড়গ্রাম জেলাপরিষদ বিজেপি দখল করেছিল কিন্তু প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তাঁরা তৃণমূলকেই জিতিয়ে দিয়েছিলেন। বুধবার লালগড়ে রোড-শো করতে গিয়ে বাধা পান শুভেন্দু অধিকারী। তৃনমূল প্রার্থীর বাধার মুখে ফিরে আসতে হয় থাকে। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ ছিল প্রশাসনের মদতেই এটা হয়েছে। এরসঙ্গে কী জেলাশাসকের বদলির কোনও যোগসূত্র রয়েছে? প্রশ্ন উঠেছে সেটাই। ২৭শে মার্চ একই সাথে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভারই ভোট গ্রহণ।