নিজস্ব সংবাদদাতা: আমাদের কী অপরাধ ছিল ঝাড়গ্রামে যে লোকসভায় আমাদের ভোট দিলেন না? ঝাড়গ্রামের জনসভা থেকে আক্ষেপটা ছুঁড়েই দিলেন জনতার উদ্দেশ্যে? হয়ত উত্তরটা তাঁর কাছেই ছিল। তাই কিছুক্ষন বক্তব্য রাখার পর নিজেই বললেন, “এখানকার তৃণমূল প্রার্থীদের এবার মা, বোনেরা ভোট দিন। জানবেন তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়া মানে আমাকে ভোট দেওয়া। তৃণমূল প্রার্থীরা জিতলে বুঝবেন আমি সরকার গড়তে পারবো।”
২০১১ আর ১৬ দু’দফায় ব্যাপক জয়ের পর ২০১৮ পঞ্চায়েত এবং ২০১৯লোকসভায় জঙ্গলমহলে মুখ থুবড়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় সংগঠনেরও বারোটা বেজেছে। নেতাদের কাছ থেকে কাটমানি ফেরৎ নেওয়ার দাবিতে উত্তাল হয়েছে ঝাড়গ্রাম। এক কথায় শাসক দলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়েছে ঝাড়গ্রাম। তারই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র গোষ্ঠী কোন্দল। এমন পরিস্থিতিতে কেবলমাত্র তাঁরই মুখ চেয়ে তৃনমূল প্রার্থীদের জেতাতে আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
মঙ্গলবার বাঁকুড়ার পর বুধবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের জনসভায় একদিকে যেমন ঝাড়গ্রাম বাসীর জন্য ছিল একাধিক প্রতিশ্রুতি, অপরদিকে তেমন বিরোধীদেরও একের পর এক বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন মমতা। তিনি বলেন, “এই তো দু’বছর হল এখানে ভোট জিতেছে বিজেপি। কিছু করেছে আপনাদের জন্য? বিজেপি লালগড়, বিনপুর, ঝাড়গ্রাম দখল নিতে চায়। আপনাদের ঘর-বাড়ি সব কেড়ে নেবে। ওরা লালগড় মানে ওরা জানে হাতি। বিজেপি এলে এআর সি করবে। আপনাদের পূর্বপুরুষের নাম চাইবে, জন্ম তারিখ চাইবে। বাড়ী-ঘর কেড়ে নেবে। আপনারা বিজেপিকে ভোট দেবেন না।“
এদিন করোনার টিকা নিয়েও মোদিকে আক্রমণ করেন মমতা। অভিযোগ করে বলেন, “আমি নরেন্দ্র মোদিকে বলেছিলাম , আমায় বিনা পয়সায় টিকা দেওয়ার জন্য অনুমতি দিন। তিনি দিলেন না। এদিকে আবার করোনা বাড়ছে। বিহার নির্বাচনের আগে মোদি বললেন, ভোটের পর বিহারে বিনা পয়সায় করোনা টিকা দেবেন। ভোটের পর কোথায় গেল সেই কথা?” একদিকে যখন বুধবার করোনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং সারছিলেন, তখন গোপীবল্লভপুর থেকে সেই করোনার টিকা প্রসঙ্গেই মোদিকে বিঁধলেন মমতা।
পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এক সময় ঝাড়গ্রামে সারা দিন রক্ত বইতো। মানুষ আসতে পারতেন না। আমি এখানে কলেজ, রাস্তা, পানীয় জল সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি।” “এবার থেকে ১৮ বছরের কোনও কেউ বিধবা হলে তাকে ভাতা দেওয়া হবে। আপনাদের আর রেশন দোকানে যেতে হবে না। দুয়ারে সরকার হবে বছরে দু’বার। বাড়ী বসেই সব পাবেন।” যোগ করেন মমতা।
সেইসঙ্গেই মমতা এদিন মা বোনেদের উদ্দেশ্যে বলেন, ২৭ তারিখ প্রথম খেলা আপনারাই খেলবেন। বিজেপির গুণ্ডারা ভোট লুট করতে এলে তাদের হাতা খুন্তি দিয়ে মেরে তাড়ানোর পরামর্শও দেন এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো।
এদিন গেরুয়া শিবিরকে সরাসরি নিশানা করেন তিনি। বলেন, ‘আগে আমাকে মারত সিপিএম, এখন মারে বিজেপি। সিপিএম-এর হার্মাদরাই এখন বিজেপি হয়েছে। অত্যাচারের বদলে অত্যাচার নয়। আমরা শান্তির বাংলা গড়ব।’ গোপীবল্লভপুরের জনসভা থেকে বিরোধীদের তোপ মমতার।
বলেন, ‘বহিরাগত গুণ্ডারা এসে ভোট লুঠ করে নিয়ে যাবে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সব লুঠ হয়ে যাবে। দুরাচার আর দুঃশাসনের পার্টি বিজেপি। কুৎসা আর অপপ্রচারের কারখানা বিজেপি। সিপিএম-এর হার্মাদরা এখন বিজেপির ওস্তাদ। বিজেপি সরকার শুধু হামলা-কুৎসা-অপপ্রচার করে।’ এদিন লালগড়েও সভা করে মুখ্যমন্ত্রী।