শশাঙ্ক প্রধান: এ যেন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো! করোনা কালের দুর্বিসহ যাত্রা পেরিয়ে আপাতত আশা কর্মীদের জুতে দেওয়া হয়েছে কোভিড ভ্যাকসিনের কাজে! নির্দিষ্ট কাজের বাইরে সপ্তাহে কয়েকদিন করে তাঁদের যেতে বলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, কোভিড টিকাকরনের কাজে কিন্তু যাতায়াত, খাওয়া খরচ, নূন্যতম পারিশ্রমিকের নাম গন্ধ নেই। এমনিতেই আশাকর্মীদের ভাতা অত্যন্ত কম তারপরও এই বাড়তি কাজের বোঝা চাপানো হয়েছে যেখানে নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে সরকারের এই কর্মসূচির নৌকা পার করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দিলেন আশাকর্মীরা।
আশাকর্মীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নির্ধারিত কাজ ছাড়াও অঞ্চলে অঞ্চলে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজে আশা কর্মীদের লাগানো হচ্ছে। সপ্তাহে কয়েকদিন করে এই অতিরিক্ত ডিউটি দেওয়া হচ্ছে। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। এই প্রোগ্রাম দীর্ঘদিন চলবে। অথচ এই কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক নেই। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে যদি কোন গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় এবং পিএনসি ভিজিট থাকে তাহলে আশাকর্মীগণ সেই ডিউটি করতে পারবেন না এবং তার জন্য নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ অর্থও পাবেন না।
অঞ্চলে অঞ্চলে কোভিড ভ্যাকসিন ডিউটির জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক এবং ওই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ এবং পিএনসি ভিজিটের জন্য জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে কেটে না নেওয়া হয় এই দাবিতে মঙ্গলবার ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বিএমওএইচ -এর নিকট আশা কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ডেবরা ব্লক-এর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক আশা কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিএমওএইচ বলেন, এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশিকা আসেনি। তাই তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে এই দাবিগুলি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলে জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়ন ডেবরা ব্লক কমিটির সম্পাদিকা কাজল চক্রবর্তী, ” একে সরকার কম পারিশ্রমিকে কাজ করায় যা কিনা সরকারের নীতি অনুসৃত দৈনিক মজুরির চেয়েও কম তার ওপর মাসের পর মাস সেই পারিশ্রমিক এসে পৌঁছায়না আমাদের হাতে। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ইন্সেন্টিভ ভাতা এখনও কোন আশা কর্মী পাননি। এ ব্যাপারে জানানো হলে বলা হয় উপর থেকে এখনো অর্থ এসে পৌঁছায়নি। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় কী চোখে আশাকর্মীদের দেখা হয়।”
চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ” করোনা মোকাবিলায় কাজ করতে গিয়ে আমাদের ডেবরা ব্লকের স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছেন আশাকর্মীরাই। এই তথ্য প্রমাণ করে দেয় সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আশাকর্মীদের কতটা ঝুঁকিপূর্ন ও নিবিড় কাজ করতে হয়। আমরা আশাকর্মীরা এই কাজ করতে পিছ পা হইনি কারন আমরা আশাকর্মীরা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবেই মনে করি কিন্তু সরকার সেটা মনে করে কী? তাহলে এই অবহেলা, বৈষম্য কেন? ডেবরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মারফৎ আমরা আমাদের দাবিগুলি পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়েছি এবং বিনয়ের সঙ্গে জানিয়েছি যে অতি দ্রুত যদি এ ব্যাপারে সমাধান না হয় তাহলে আমরা সারা ব্লক জুড়ে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”