অশ্লেষা চৌধুরী: “এ যেন ঝি-কে মেরে বাড়ীর বৌ-কে শিক্ষা দেওয়া”! ঠিক যেসময় শান্তিকুঞ্জের বাড়ীতে বিজেপি নেত্রী লকেটের প্রবেশ, শিশির-দিব্যেন্দুর যখন বিজেপি সাংসদ অতিথির আপ্যায়নে পুরোপুরি ব্যস্ত, ঠিক তখনই সাংবাদিক বৈঠক করে ১০ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করল শাসক শিবির। তাও আবার শুভেন্দু অধিকারীর সাথে গোপনে যোগাযোগ ও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে। এমনই অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের ১০ জন তৃণমূল নেতা সম্পর্কে। আর এই বিশ্বাসঘাতকতা করার অপরাধে তাদের ৩ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হল।
শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানিয়েছেন জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। দলে থেকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কেউই ছাড় পাবেন না বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি এও বলেন, পরবর্তীতে জেলার অন্যান্য নেতা, কর্মীদের উপরও নজরদারি চলবে। কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, সেই প্রমাণ পেলেই ফের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দল। বহিষ্কৃত এই দশ নেতা হলেন, দিবাকর জানা, সুনীল দেব অধিকারী, শিলাদিত্য আদক, নিকুঞ্জবিহারী মান্না, বিভাস কর, মিনতি পট্টনায়েক, দেবনাথ দাস, তনুশ্রী জানা, রাখী আদক, নীলিমা দেব অধিকারী। এঁদের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা, এর আগেও বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে দলে ফেরানোও হয়েছিল। কিন্তু আবারও দল তাঁকে বিতাড়িত করেছে।
এদিকে, সৌমেন বাবু যখন সাংবাদিক বৈঠক করছেন ঠিক তখনই কাঁথিতে অধিকারী পরিবারের বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ বাড়ীতে তখন শুভেন্দু ছিলেন না, শিশির বাবু ও দিব্যেন্দুর সঙ্গে লকেট দেখা করেন ৷ যদিও দু’পক্ষই বিষয়টিকে ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ’ বলে দাবী করেন, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদীর সভার আমন্ত্রণ জানাতেই এসেছিলেন লকেট৷
আর সাংবাদিক সম্মেলনে ‘‘এবার বহিষ্কার পর্ব শুরু হল৷ বাকি যারাও দল বিরোধী কাজে যুক্ত রয়েছেন তাঁদেরও ধাপে ধাপে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে৷’’ – এমন মন্তব্য যে অধিকারী পরিবারের বাকি দুই সদস্যের দিকেই ইঙ্গিত করছে, সেটাও মনে করছেন অনেকেই।
কারণ শুভেন্দু ও সৌমেন্দুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের পর থেকেই শাসকশিবিরের সাথে অধিকারী পরিবারের ফাটল চওড়া হতে শুরু করে। কেড়ে নেওয়া হয় শিশির বাবুর দিঘা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ৷ এমনকি জেলা সভপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়৷ এরপরেই ঘনিষ্ঠ মহল থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শিশির বাবু, বলেছেন জন্ম লগ্ন থেকে দলটাকে জেলায় তৈরি করলাম, আর আমাকেই অপমান৷ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব পাবে। মেদিনীপুরের মানুষ, এর জবাব দেবেন। আর এমন আধ ভাঙা সম্পর্ক যে কোনও মুহূর্তে যে পুরোটাই ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে এবং শিশির বাবু ও দিব্যেন্দুও যে পদ্ম শিবিরে যোগ দিতে পারেন সেকথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না একেবারেই। আর এদিন সমীর বাবুর সাংবাদিক সম্মেলনে দেওয়া বার্তাও সেইদিকটাই বেশি করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। এবার দেখার পালা এই জল্পনা ও ধারণা বাস্তবে কতটা রূপ পায়।