নিজস্ব সংবাদদাতা: না, কেউই তাঁকে ধাক্কা দেননি। তেমন কোনও গুরুতর অভিযোগ এখনও অবধি দায়ের হয়নি। তাহলে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হত। তেমনটাও নেওয়া হয়নি। সবচেয়ে যাঁদের নমস্কার জানানোর সময় এই দুর্ঘটনা সেই প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ ধাক্কা দেয়নি। ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় দুর্ঘটনা রোধ করতে বড় গাড়ি আটকানোর যে খুঁটি পোঁতা হয়েছিল সেই খুঁটির ধাক্কাতেই দরজা বন্ধ হয়ে আঘাত লেগেছে মুখ্যমন্ত্রীর।
বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ১২নম্বর বেডে শুয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তাতেও একই কথা বলছেন তিনি। বলেছেন, “যাঁরা আমার কর্মী-ভাইবোন আছেন, তাঁদের বলছি, গতকাল আমার খুব জোর চোট লেগেছিল। পায়ে চোট আছে। লিগামেন্টেও চোট লেগেছে। মাথায় এবং বুকে খুব ব্যথাও হয়েছে। খুব বড় চোট লেগেছে। গাড়ির বনেটের উপরে দাঁড়িয়ে সকলকে নমস্কার করছিলাম। তখন এমন জোরে চাপ আসে, গাড়ির দরজাটা আমার পায়ের উপর চেপে যায়। আমার কাছে যে ওষুধগুলো ছিল সেগুলো খেয়ে কলকাতার দিকে রওনা হই। ডাক্তারদের চিকিৎসাতেই আছি।”
ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরাও। নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে যে মিষ্টি দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে সেই মাইতি মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক নিমাই মাইতি জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত লাগার পরেই তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা আমার দোকান থেকেই বরফ নিয়ে গিয়ে তাঁর পায়ে লাগিয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী যখন জনতাকে নমস্কার করছিলেন গাড়ির দরজার মুখে বসে তখন কাছেই ছিলেন প্রৌঢ় চিত্তরঞ্জন দাস, যুবক সৌমেন মাইতিরা। দুজনেই জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির চালক খেয়াল করেননি রাস্তার ওপর পোঁতা সেই লোহার খুঁটি। মানুষের ভিড়ে সেই খুঁটি আড়াল হয়ে গেছিল। গাড়ি গড়িয়ে যেতেই সেই খুঁটিতে লেগে খোলা দরজা বন্ধ হতে গিয়ে জোরালো ধাক্কা মারে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ আমি অনুরোধ করব সকলের কাছে, শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন, ভাল থাকুন। এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের কোনও অসুবিধা হয়।’ কিন্তু ততক্ষণে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা শুরু হয়ে গেছে। গন্ডগোল, অবরোধ, সংঘর্ষের মত ঘটনাও ঘটেছে। আর এরজন্য দায়ি সেই মুখ্যমন্ত্রীর চার পাঁচজন ধাক্কা দেওয়ার তত্ত্ব। ঘটনার প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু গাড়ির দরজা লাগার কথাই বলেছিলেন কিন্তু পরে সেই বয়ান বদলে গেল কেন? সেটাই আশ্চর্যের। এটা না হলে হয়ত এই সমস্যা হতনা। এর ফলে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রচার চলছে যে নন্দীগ্রামে স্নায়ুর চাপে পড়ে গিয়েছেন তিনি। বাজারে কথা রটছে টালিগঞ্জ থেকেও দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন তিনি। সোজা কথায় নন্দীগ্রামের তৃনমূল কর্মীরা কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কর্মীদের আশ্বাস দিয়ে ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আশা করি আমি আবার দু’তিন দিনের মধ্যেই নিজের ফিল্ডে ফিরে যেতে পারব। তবে হয়তো পায়ের সমস্যা থাকবে। কিন্তু আমি ম্যানেজ করে নেব। আমার মিটিং কিছুই আমি নষ্ট করব না। হয়তো কিছু দিন আমাকে হুইল চেয়ারে ঘুরতে হবে।’’
নন্দীগ্রাম তৃনমূলের পক্ষ থেকেও জানা গেছে দিদি যেখানে যেখানে প্রচার করবেন কিংবা যখন মঞ্চে উঠবেন সেখানে সেভাবেই মঞ্চ করা হবে যাতে হুইল চেয়ার উঠতে পারে। কিন্তু যে প্রশ্নটা নন্দীগ্রামে তৃনমূলকর্মীদের হুইল চেয়ারে বা প্রতিবন্ধকতায় পৌঁছে দিল তা’হল অযথা মুখ্যমন্ত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার বদনামটা নন্দীগ্রামকে দেওয়া হল কেন? যে নন্দীগ্রামই মুখ্যমন্ত্রীকে ১২আনা মুখ্যমন্ত্রী করেছে। বিজেপি এই প্রশ্ন এখনই তুলতে শুরু করেছে।