অশ্লেষা চৌধুরী: ছাত্রীর মায়ের সাথে মাখো মাখো প্রেম, সম্পর্কের ঘনিষ্টতা পৌছায় চরম পর্যায়ে। পথের কাঁটা ছাত্রীর বাবা; রীতি মত ঠান্ডা মাথায় ছক কষে সেই কাঁটাকেই উপরে ফেললেন সুচালূ বুদ্ধিসম্পন্ন গৃহ শিক্ষক। রাতের আঁধারে চালালেন নৃশংস হত্যাকাণ্ড। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার মাজিদা পঞ্চায়েতের বড়ধামাস গ্রামে ভালোবাসা দিবসে (১৪ই ফেব্রুয়ারি) টোটো চালকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর প্রকাশ, যাতে বাকরুদ্ধ পুলিশও।
গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার মাজিদা পঞ্চায়েতের বড়ধামাস গ্রামে রাতের আঁধারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বলি হন পেশায় টোটোচালক পিন্টু পাল, বয়স ৩৫ বছর। রহস্যজনক এই খুনের ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, নারী সংক্রান্ত কোন কারনে এই খুন হতে পারে। তারাও জুড়ে যান নৃসংশ এই খুনের কিনারা করতে।
তদন্তে নেমে পুলিশ পিন্টুর স্ত্রীয়ের সঙ্গে কথা বলে। আর তাঁর কথাতেই ধরা পড়ে একাধিক অসঙ্গতি। উঠে আসে পিন্টু ও তার মেয়ের গৃহশিক্ষক জিতেন ঘোষের নাম। জানা যায়, জিতেনের সঙ্গে পিন্টুর স্ত্রীয়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে। পিন্টু যেহেতু কাজের সূত্র বাইরে থাকতেন, তাই জিতেনের সাথে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কের বন্ধন যেন কিছুদিনের মধ্যেই বেশ আটোসাটো হয়ে ওঠে। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রীর মা ও জিতেনের একসঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, ফুচকা খাওয়া সবই চলত। কিন্তু তাদের এই প্রেমে খলনায়ক হয়ে দাঁড়াল লকডাউন। ভিন রাজ্যে কাজ হারিয়ে বাড়ী ফিরে এলেন পিন্টু। কিন্তু নিজেদের প্রেমের পথে এই কাঁটাকে কিছুতেই স্থান করে দিতে নারাজ জিতেন। আর তাই ছক কষা শুরু করলেন তিনি; নিজেরই অন্য এক ছাত্রকে করলেন সঙ্গী। প্রেমের পথের কাঁটা তুলতে বেছে নিলেন ভালোবাসা দিবসের বিশেষ দিনটিকেই। নির্ধারিত ঐ দিনেই গুলি করে ও গলার শ্বাসনালী কেটে নৃশংস ভাবে খুন করা টোটো চালক পিন্টুকে। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সেসময়।
খবর পেয়ে রাতেই পূর্বস্থলী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতব্যক্তির দেহ পরেরদিন বর্ধমান হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। কারা টোটো চালককে খুন করে পালালো তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যায় মৃতের পরিবার ও পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা বুঝেই উঠতে পারেন না, কে বা কারা এমন নৃশংস ভাবে পিন্টুকে খুন করে থাকতে পারে! পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ দায়ের করে পিন্টুর পরিবারের সদস্যরা দোষির কঠোর শাস্তির দাবী জানান। এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ আঠারো দিনের মাথায় খুনের কিনারা করে। পুলিশের দাবী, জেরায় নিজেদের অপরাধ কবুল করেছেন দুই অভিযুক্ত। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে, জিতেন আগে দু’বার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন জিতেন। তিনিও আত্মহত্যা করেছেন।
প্রেমের সম্পর্ক বরাবরই নদীর মতন, যতক্ষণ সীমার মধ্যে রয়েছে ততক্ষণ সকলের জন্য মঙ্গল। তবে যদি বাঁধ ভেঙেছে তাহলে দুকূল ছাপিয়ে আসে প্লাবন, যার পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। আর এরই জ্বলন্ত উদাহরণ এই গৃহশিক্ষক জিতেন।