নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রকাশ্যে মঞ্চে কান ধরে উঠবোস করে নিজের তৃনমূল করার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করলেন খড়গপুর তৃনমূলের এক নেতা। তৃনমূল কংগ্রেসের খড়গপুর-২ ব্লকের সহসভাপতি পদে থাকা সুশীল পাল ওরফে বাচ্চুর প্রকাশ্য মঞ্চে এই ধরনের আচরণে হতবাক হয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। মুখ ফিরিয়ে মঞ্চের পেছনে চলে যেতে দেখা যায় তাঁকে।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকালে খড়গপুর গ্রামীন থানার পিংলা বিধানসভার অন্তর্গত চক গোপীনাথপুরে। এখানে শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক কমিটির উদ্যোগে একটি যোগদান মেলার আয়োজন করা হয়। সেই যোগদান মেলায় তৃনমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিতে এসে এই কথা গুলি বলেন সুশান্ত পাল।
মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপি ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য, বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখার্জী সহ একগুচ্ছ নেতা কর্মী। বিজেপির এক। জেলা নেতা জানান, ” স্থানীয় তৃনমুলের শতাধিক কর্মী এই যোগদান মেলায় বিজেপিতে আসলেও সবাইকে তাঁদের বক্তব্য রাখতে দেওয়ার মত সুযোগ ছিলনা। বাচ্চুবাবু (সুশান্ত পাল) বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন মিনিট খানেক তাঁকে বলতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি যে অমন অভাবনীয় কান্ড করে ফেলবেন ভাবতে পারিনি। ওনার কান ধরছি বলাটাই যথেষ্ট ছিল। উনি সত্যি সত্যি উঠ বোস করতে শুরু করবেন বুঝতে পারিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি তিন চারবার ওঠবোস করে ফেলেন। বিষয়টা বুঝেই তুষার দা ওনাকে থামিয়ে দেন।”
মাত্র ৩০সেকেন্ড বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুশান্ত পাল বলেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে এই ব্লকে আমরা ভারতীয় জনতা পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই শুরু করেছিলাম। ২০০৫ সালে তৎকালীন শাসকদলকে সরানোর জন্য তৃনমূল কংগ্রেসের হাত ধরে যে অন্যায় আমি করেছি সেই অন্যায়ের জন্য আমার এই পুণ্য মাটিতে আমি কান ধরে ওঠবোস করে তার প্রায়শ্চিত্ত করছি।” এরপরই মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই কান ধরে উঠবোস শুরু করে দেন পাল। বক্তব্য রাখার সময় শুভেন্দু, অন্তরা, তুষার মুখার্জীরা হাততালি দিচ্ছিলেন কিন্তু যখন সত্যি সত্যি পাল কান ধরে উঠবোস শুরু করে দেন তখন হকচকিয়ে যান সবাই। তুষার মুখার্জী দ্রুত শুভেন্দুকে পেছনে সরে যেতে বলে পালের হাত ধরে থামান। ততক্ষনে তিনচার ওঠ বোস হয়ে গেছে। উল্লাসে ফেটে পড়েছে সমবেত জনতা।
কেন তিনি তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন এর উত্তরে পাল বলেন, ‘তৃনমূলের নেতৃত্বে সরকারি অর্থ সম্পত্তি লুটপাট আর কাটমানির রাজত্ব শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলেই দলে কোণঠাসা হতে হয়। এই পরিস্থিতি মানতে পারিনি বলেই দলে এক কোনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল আমাদের মত সৎ কর্মীদের। এরপর ওই দলে থাকার কোনও প্রয়োজন মনে করছিলামনা।” পাল আরও জনান, ‘ পশ্চিম মেদিনীপুরে এই কাটমানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে বর্তমান জেলা সভাপতি অজিত মাইতির হাত ধরে। শুনছি তিনি এই পিংলা বিধানসভা থেকেই দাঁড়াবেন। তাঁকে হারানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে আমি ভারতীয় জনতা পার্টিতে ফের ফিরে এলাম।”
বিষয়টি অজিত মাইতির প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। দলের তরফে জানানো হয়েছে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে তৃনমূলের সূত্রে জানানো হয়েছে, “দল তাঁকে যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছিল। এরপর তিনি কোথায় কান ধরে দলত্যাগ করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার।”