অশ্লেষা চৌধুরী: মাদককাণ্ডে গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। পূর্ব বর্ধমানের গলসি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশকে বাধা দেওয়ায় রাকেশের দুই ছেলেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ফোনের টাওয়ার ধরে লোকেশনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কলকাতা পুলিশের রাওডি শাখার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে চলছিল একের পর এক নাটক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবারে তাঁকে প্রথমে সমন পাঠিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু দিল্লী যাবেন বলে হাজিরা এড়ানোর পরে তাঁর বাড়ীতে পৌঁছায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের পথ আগলে দাঁড়ান রাকেশের দুই ছেলে। কাগজ দেখতে চেয়েই এই পথ আটকানো বলে দাবী করেন তারা। এর পরই দক্ষিণ কলকাতার পুরো বাড়ী ঘিরে ফেলে পুলিশ।
এমনকি রাকেশ সিংয়ের বাড়ীর দরজার তালা ভাঙার প্রস্তুতি শুরু করেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। যদিও শেষ পর্যন্ত তার দরকার পড়েনি। বিকেল ৫টা নাগাদ পুলিশ আধিকারিকদের বাড়ীতে ঢোকার অনুমতি দেন রাকেশ সিংয়ের আত্মীয়রা। তবে জারি করেন কতগুলি শর্ত। জানান, বেশি পুলিশকর্মী একসঙ্গে বাড়ীর ভিতরে ঢুকতে পারবেন না এবং তল্লাশি অভিযানের ভিডিয়োগ্রাফি করবেন রাকেশ সিংয়ের পরিবারের সদস্যরাও। এরপর তল্লাশি অভিযান করলেও রাকেশের সন্ধান মেলেনি সেইসময়।
তারপর রাকেশের মোবাইল টাওয়ার লোকেশান ট্র্যাক করতে শুরু করে পুলিশ। জানা যায় দিল্লী নয়, এই রাজ্যেই আত্মগোপন করে আছে রাকেশ। শুরু হয় বর্ধমানের হাইওয়ের ধারে নাকা-চেকিং। তারপরই একটি গাড়িতে গলসি পেরোনো্র সময় রাকেশকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। আপাতত তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতার পথে। তবে রাকেশের বাড়ীতে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালানোর পরেই কলকাতা পুলিশের নারকোটিক্স বিভাগে অফিসাররা এবং স্থানীয় পুলিশ অফিসাররা আটক করেছিল রাকেশের দুই ছেলেকে।
শুক্রবার মাদকচক্রে বিজেপি যুব মোর্চা নেত্রী পামেলা গোস্বামী ও বিজেপি নেতা বলে পরিচিত প্রবীর দে, যার সাথে পামেলার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়, তাদের গ্রেপ্তার করে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ। এরপরেই কোর্ট লকআপে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে পামেলা বলেন, কৈলাস বিজয়বর্গীয় ঘনিষ্ঠ রাকেশ সিং গোটা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন। রাকেশ ফাঁসিয়েছেন পামেলাকে। তবে ঘটনায় মুখ খোলেন রাকেশ সিং। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পামেলাকে দিয়ে বলানো হচ্ছে এসব কথা। তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পুলিশকে দিয়ে এই সব কাজ করাচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদত রয়েছে গোটা ঘটনায়। কিন্তু ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাকেশ সিংকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টের মধ্যে দেখা করতে বলে সমন পাঠায় কলকাতা পুলিশ। তবে রাকেশ জবাবে জানান তিনি দিল্লী যাওয়ার কারণে দিনকয়েক পরে হাজিরা দিতে পারবেন। ওদিকে কলকাতা পুলিশের তলবি নোটিশে স্থগিতাদেশ চেয়ে করা মামলাতেও ধাক্কা খান রাকেশ। স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন দুপুরেই পুলিশ হাজির হন রাকেশের বাড়ীতে। তবে সেই সময় পুলিশ তার দেখা না পেলেও শেষমেষ গলসির হাইওয়ে থেকে রাকেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।