- নরেশ জানা: সামনে ভোট তাই বাঙালি সেন্টিমেন্টে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করলেননা প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইআইটি খড়গপুরের (IIT-Kharagpur)য়ের ৬৬তম সমাবর্তন ভাষন দেওয়ার পাশাপাশি কথা ছিল তিনি আইআইটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্বোধন করবেন যাঁর নাম ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চের বদলে জনসঙ্ঘ নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে করতে চেয়ে সম্প্রতি প্রস্তাব পাশ করেছিল আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষ। আর সেই নাম ফলকেরই আবরণ উন্মোচন করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কিন্তু আবরণ উন্মোচন তো দুরের কথা, কথায় কথায় মোদি যাঁকে ‘বাঙাল কি সুপুত্র’ বলে থাকেন সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নাম পর্যন্ত উচ্চারন করেননি তিনি বরং তাঁর সংক্ষিপ্ত সমাবর্তন সম্ভাষনে একবার উচ্চারণ করেছেন নেতাজীর নাম।
এদিন নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে ঘোষণা মতই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ‘আমরা বামপন্থী’ খড়গপুর সংগঠন। প্রবীণ বামপন্থী নেতা অনিল দাসের নেতৃত্বে প্রায় শ’খানেক যুবক যুবতী জড়ো হয়ে শ্লোগান সাউটিং শুরু করে বিধানচন্দ্র রায়ের বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নামে হাসপাতালের নামকরন করায়। তাঁরা আরও দাবি করেন আইআইটি ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসের যে নামফলক রয়েছে সেখান থেকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের নামও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
খড়গপুর মহকুমা পুলিশ (SDPO)শাসক দীপক সরকারের নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী ক্যাম্পাসের গেট আগলে দাঁড়ায়। ঢাল এবং লাঠি ধারি বাহিনীকে টপকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢোকার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন। দীপক সরকার তাঁদের অনুরোধ করেন বিক্ষোভ প্রদর্শনে পুলিশ বাধা দেবেনা কিন্তু ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভকারীরা যেন প্রবেশ না করেন। তিনি আরও জানান, এই সময় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা চলছে তা যেন বিঘ্নিত না হয়। এই নাম পরিবর্তনের বিরোধিতায় এদিন ওই একই জায়গায় বিক্ষোভে সামিল হয় ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের(DSO)একটি দলও। এদিন বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনও। তবে শেষ অবধি খবর আসে এই পর্যায়ে হাসপাতালের উদ্বোধন করছেননা প্রধানমন্ত্রী। এরপরই ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে নাম পরিবর্তনের এই খবর রাষ্ট্র হতেই বাংলা জুড়েই ক্ষোভের আগুন বাড়ছিল ধিকিধিকি করে। বিজেপি বাদ দিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এই নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তৃনমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও কংগ্রেস রাস্তায় নামার ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছিল। সামনে বিধানসভা নির্বাচন, সেখানে বিধানচন্দ্র রায় বনাম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বিতর্ক শুরু হলে তা বিজেপির পক্ষে সুখকর হবেনা ভেবেই ২৪ঘন্টা আগেই এই বিতর্ক থেকে সরে আসে আইআইটি কর্তৃপক্ষ এবং সম্ভবত তা পিএমওর নির্দেশেই। রাতেই কাপড় দিয়ে মুড়ে ফেলা হয় হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত শ্যামাপ্রসাদ নামাঙ্কিত নাম ফলক। আর যাঁর হাত ধরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী নামাঙ্কিত এই হাসপাতালে উদ্বোধন হবে বলে কয়েকঘন্টা আগেও ঠিক ছিল সেই প্রধানমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদের নাম পর্যন্ত নেওয়ার ঝুঁকি নেননি। বরং স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশ প্রবেশ করতে চলেছে এই প্রসঙ্গে একবার নেতাজী শব্দটি উচ্চারণ করে গেছেন।
প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্টার তমাল নাথ জানিয়েছেন, ‘আমরা সোমবারই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত হাসপাতাল উদ্বোধনের কাজ স্থগিত রাখার। আমরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অহেতুক বিতর্কের মধ্যে যেতে চাইনা। বাইরে কারা বিক্ষোভ করছেন, কেন করছেন জানিনা। তবে আপাতত এই কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ফের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
অন্যদিকে সমাবর্তনের উদ্বোধনী ভাষণে শুরুতেই বিধানচন্দ্র রায়ের নাম নিয়ে আইআইটি ডিরেক্টর বীরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি ভারতের প্রথম আইআইটি খড়গপুরে করার পেছনে তাঁর অবদানের কথা বলেছেন। নাম করেছেন আইআইটি খড়গপুরের প্রথম ডিরেক্টর জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের। প্রধানমন্ত্রী এদিন আইআইটি খড়গপুরের উদ্যোগে ভারতের প্রাচীন শাস্ত্র সমূহ চর্চার প্রশংসা করেছেন আর পড়ুয়াদের উৎসাহ দিয়েছেন জীবনে চলার পথে ‘সেলফ-থ্রি’ অনুসরণ করতে। এই সেলফ থ্রি হল সেলফ আ্যওয়ারনেশ বা আত্মসচেতনতা, সেলফ কনফিডেন্স বা আত্মবিশ্বাস এবং সেলফলেশনেশ বা নিঃস্বার্থপরায়নতা। অধ্যাপক তিওয়ারি তাঁর ধন্যবাদ সূচক বাক্যে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে এই নতুন তিন মন্ত্র শিখলেন তিনি!