Homeএখন খবরখড়গপুরে পর শালবনীর বিধায়কের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ , 'ATM দাদা' শ্রীকান্তের রিপোর্ট কার্ড!...

খড়গপুরে পর শালবনীর বিধায়কের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ , ‘ATM দাদা’ শ্রীকান্তের রিপোর্ট কার্ড! পশ্চিমের আরও কিছু বিধায়কের রিপোর্ট কার্ড তৈরি করেছেন কর্মীরাই

নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপি বা সিপিএম নয়, তৃণমূলকে হারাতে যথেষ্ট তৃনমূলই! অন্ততঃ ২০২১য়ের আগে এমনটাই মনে হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। পি.কে র রাস্তা ধরেই দলীয় বিধায়কদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট কার্ড তৈরি করছেন দলেরই একাংশ আর সেই রিপোর্ট কার্ডে দলিল দস্তাবেজ সহ উল্লেখ করা হবে ২০১১ পর বিধায়ক ও তার পরিবারের নামে সৃষ্টি হওয়া সম্পত্তি, চারিত্রিক স্খলন সহ একাধিক বিষয় যা ভোটের মুখেই দলেরই একাংশ বাজারে লিফলেট, পোষ্টার আকারে ছাড়তে চলেছে বলে জানা গেছে।

সূত্রের খবর ১০জন বিধায়ক এবং জেলার কয়েকজন প্রথম সারির তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধেই এমনই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে যার প্রথম রিপোর্ট কার্ডটি প্রকাশ করা হয়েছে শালবনীর বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর নামে। মাহাতো এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেই রিপোর্ট কার্ডের পোষ্টার পড়েছে শালবনী থানার ভীমপুর এবং কয়েকটি এলাকায়। যা নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মাত্র কয়েকদিন আগেই খড়গপুর গ্রামীনের বিধায়ক দীনেন রায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোষ্ট করে খড়্গপুরের দলীয় কর্মীদের তাঁকে অহংকারী ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে মিছিলের আয়োজন করেছিলেন। এরপরই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে স্বয়ং রাজ্য নেতৃত্ব। আপাততঃ মিছিল না হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও দলের ওই অংশের কর্মীদের মধ্যে ছাই চাপা আগুন রয়ে গেছে। প্রার্থী ঘোষনার পর সে আগুনের বহিঃপ্রকাশ দেখা যেতেই পারে বলে জানা গিয়েছে। আর তার রেশ মিটতে না মিটতে এবার একেবারে রিপোর্ট কার্ড ছাপিয়ে পোষ্টার পড়ে গেছে শালবনী বিধানসভা এলাকায়।

জানা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা -৩ ব্লক ও শালবনী ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় কে বা কারা এবং কি উদ্দেশ্যে এই পোস্টার ছড়িয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে দলেরই একটি অংশ রয়েছে নেপথ্যে। পোষ্টারে শ্রীকান্ত মাহাতো বিধায়ক হওয়ার আগে তার এবং তার পরিবারের পারিবারিক সম্পত্তি কি ছিল এবং বিধায়ক হওয়ার পরে সেই সম্পত্তির পরিমাণ কত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে৷ শুধু শ্রীকান্ত মাহাতোই নয় তার স্ত্রী, ভাই, শ্যালক, শ্যালিকা,শ্যালিকার স্বামী সহ আরও অনেক আত্মীয় স্বজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এবং মহিলা ঘটিত কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই পোষ্টারে। বিধায়কের স্ত্রী একটি কলেজের অধ্যাপিকা । যোগ্যতা না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে কলেজে চাকরী পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে পোস্টারে । এমনকি বিধায়কের ব্যক্তিগত চরিত্র এবং মহিলা ঘটিত ব্যাপার নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন তোলা হয়েছে পোস্টারে । প্রশ্ন তোলা হয়েছে একাধিক স্কুল শিক্ষিকা, দলের মহিলা প্রাক্তন প্রধান, মহিলা ফিজিওথেরাপিস্টকে তিনি কিসের বিনিময়ে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন?

রিপোর্ট কার্ডে দাবি করা হয়েছে উঠে প্রতিদিন ৫০হাজার টাকা কালেকশন করার লক্ষ্য নিয়ে থাকেন তিনি। নিজের গাড়ির চালক সহ একাধিক নাম প্রকাশ করা হয়েছে যাঁদের কে অথবা যাঁদের মারফৎ চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন। কোন গ্রাম বা এলাকা থেকে কত টাকা তুলেছেন তাঁর অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে শালবনী ব্লকের লালগেড়িয়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা থেকে ৪০লক্ষ টাকা আদায় করেছেন চাকরি দেওয়ার নাম করে। বলা হয়েছে ওনার এলাকার প্রতিটি বুথ থেকে ৬ থেকে ৮লক্ষ টাকা আদায় করেছেন, আবাস যোজনার বাড়ি পিছু ১৫হাজার টাকা করে নিয়েছেন। আর তাই নাকি শ্রীকান্ত মাহাতোকে এটিএম কার্ড বলা হয় এমনটাই দাবি করা হয়েছে ওই পোষ্টারে।

জমির জে. এল নম্বর ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করে শালবনীর একাধিক এলাকায় তাঁর কোটি কোটি টাকার জমি এবং বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তারও বাইরে মেদিনীপুর শহর, বাঁকুড়া কলকাতা, ডেবরায় তাঁর অথবা তাঁর পরিবার সদস্যদের নামে জমি বাড়ি রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু মেদিনীপুর শহরেই ধর্মা, রাঙামাটি, কুইকোটা সহ বিভিন্ন এলাকায় ৫টি জায়গা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও এই ব্যাপারে শ্রীকান্ত মাহাতর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । ফোন করা হলে ফোন ধরেননি তিনি। তবে দলের শালবনীর এক যুব নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন এই পোষ্টারের কথা এবং বলেছেন যে বিধায়কের এলাকারই কিছু দলীয় কর্মী যাঁরা মাহাতর বিরোধী তাঁরাই এটা করছেন।

অন্য একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে চন্দ্রকোনা রোড এলাকার এক তৃণমূল নেত্রী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই পোস্টার ছড়াচ্ছে তার অনুগামীদের দিয়ে যাতে মাহাতো এবার টিকিট না পায় এবং পরিবর্তে তিনি টিকিট পান।
তবে শুধুই খড়গপুর গ্রামীণ বা শালবনী নয়, পি. কের স্টাইলে রিপোর্ট কার্ড এবার বার করতে চলেছে আরও অন্ততঃ ১০টি বিধানসভা এলাকার কিছু দলীয় কর্মী যাঁদের মাথায় বিধায়ক বিরোধী নেতাদের হাত রয়েছে। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলছে তথ্য সংগ্রহের কাজ। জানা গেছে শুধু বিধায়কই নয় জেলার কয়েকজন হোমড়া চোমড়া নেতার বিরুদ্ধেও বেরুবে রিপোর্ট কার্ড।

RELATED ARTICLES

Most Popular