Homeএখন খবরশ্মশানে মড়া পুড়িয়ে এসে মদ্যপ ভাইয়ের মারে শ্মশানে গেল দাদাও! নারায়ণগড়ের গ্রামে...

শ্মশানে মড়া পুড়িয়ে এসে মদ্যপ ভাইয়ের মারে শ্মশানে গেল দাদাও! নারায়ণগড়ের গ্রামে গ্রামে ‘চোলাই’য়ের বিষময় ফল, বলছেন গ্রামবাসীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা: শ্মশানে এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে আসার পরই মদ্যপ ভাইয়ের মারে শ্মশানেই যেতে হল এক ব্যক্তিকে। বুধবার যে শ্মশানে সৎকারকার্যে অংশ নিয়েছিলেন এই মৃত ব্যক্তি বৃহস্পতিবার সেই শ্মশানেই সৎকারের ঠিকানায় লেখা হল তারই নাম। শ্মশানে সৎকার করতে গিয়ে মদ খাওয়ার এই প্রতিফল নজির হয়ে রইলপশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানা এলাকার কুনারপুর গ্রাম। যেখানে মদ্যপ অবস্থায় দুই ভাইয়ের মধ্যে বচসা এবং হাতাহাতির জেরে মৃত্যু হল দাদার।

পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম গুরুপদ ভক্তা(৪৩)। মৃত গুরুপদ পেশায় দিনমজুর ছিলেন। বুধবার পাড়ায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় ।তারই সৎকারের জন্য শ্মশানে গেছিলেন গুরুপদ এবং তাঁর ভাই বিবেক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘এখন শ্মশানে মড়া পোড়াতে গিয়ে মদ খাওয়াটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই ভাই সেখানে বসে খায় এবং সৎকার কার্য করে বাড়ি ফিরে আসে।’ আর তার কিছুক্ষণ পরই  বচসায় জড়িয়ে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত গুরুপদর স্ত্রী লক্ষী জানিয়েছেন, ‘ বাড়িতে এসে খেতে বসেছিল আমার স্বামী। তখন বেলা প্রায় দেড়টা। খেতে বসে আমার সঙ্গে ঝগড়া করছিল। ওই সময়ে আমার দেওয়ার এসে তার দাদাকে বলে কেন তুই বৌদির সঙ্গে ঝগড়া করবি? বাইরে মদ খেয়ে এসে তুই মেয়ে মানুষের ওপর ঝাল ঝাড়বি? আমার স্বামী বলে, আমি আমার বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করব, তুই মাঝখানে বলার কে? এরপরই দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। আমি দু’বার দুজনকেই ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু আবারও মারপিট শুরু হয়। এরপরই আমার দেওর কোথায় মারল জানিনা, আমার স্বামী ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়। আর সে ওঠেনি।”

প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, ‘ হাতাহাতিই হচ্ছিল দুজনের। দুজনই এতটাই মদমত্ত ছিল যে লক্ষী দু’দুবার ছড়ানোর পরও তারা ফের হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ওদের ছাড়াতে গিয়ে লক্ষী নিজেও মার খাচ্ছিল বলে তৃতীয়বার ছাড়াতে যায়নি। এরপরই এই ঘটনা ঘটে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দাদার। ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক চাঞ্চল্যে ছড়ায়, ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আশেপাশের মানুষজন। ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল রাতেই ঘটনাস্থলে নারায়ণগড় থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। দফায় দফায় প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলছিল এই হাতাহাতি।’

ঘটনার পরই সম্ভবত নেশা কেটে যায় বিবেকের। ঘটনার গুরুত্ব অনুভব করেই গা ঢাকা দেয় সে। তাঁর খোঁজে বিভিন্ন সম্ভাব্য জায়গায় তল্লাশি চালানোর পর বৃহস্পতিবার একটি জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত নারায়ণগড় থানার পুলিশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে, বিবেককে গ্রেপ্তার করে। লক্ষ্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে গুরুপদর।

এই ঘটনার জন্য গ্রামে গ্রামে চোলাই মদের রমরমা কারবারকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ এলাকায় যেভাবে চোলাই মদের বেলাগাম কারবার চলছে তার ফলে পারিবারিক অশান্তি বেড়েই চলেছে। অহেতুক অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ছে পরিবার থেকে প্রতিবেশীরা।
গ্রামবাসীদের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় অবৈধ চোলাই মদের ঠেকের রমরমা বেড়েছে। এর জেরেই এই ঘটনাগুলি ঘটছে। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে, এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবিলম্বে এই অবৈধ চোলাই মদের ঠেকগুলি বন্ধ করা হোক।

RELATED ARTICLES

Most Popular