নিজস্ব সংবাদদাতা: মানুষের পৈশাচিক কান্ডের স্বাক্ষী এবার তামিলনাড়ু। লোকালযে ঢুকে পড়া একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতালকে তাড়ানোর জন্য ছুঁড়ে মারা হয়েছিল জ্বলন্ত টায়ার। হাতির কানে আটকে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে জ্বলল সেই টায়ার। ১৭ দিন মর্মান্তিক যন্ত্রণার পর মৃত্যু এসে মুক্তি দিল সেই হতভাগ্য বন্যপ্রাণকে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের এই কীর্তি! গত ৮ই জানুয়ারি এই ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলার উটি র কাছে। শুক্রবার এই ঘটনায় ২জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বনদপ্তর জানিয়েছে এমনিতেই হাতিটি অসুস্থ ছিল। তার পিঠে একটি ক্ষত থাকায় গত ৪৫দিন ধরে হাতিটিকে চিকিৎসা করছিল বনদপ্তর।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত ৮ ই জানুয়ারি মসিনাগুড়ির কাছে মাবানাহাল্লায় একটি বেসরকারি রিসর্টের কাছে পার্ক করা একটি বিলাসবহুল চারচাকা গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে দেয় হাতিটি। এরপরই স্থানীয় মানুষজন হাতিটিকে তাড়ানোর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করে বলে একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে।
মাসিনাগুড়ির মুদুমালাই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর এলসিএস শ্রীকান্ত জানান, গত নভেম্বর থেকে হাতিটিকে অনুসরণ করছিল বন দফতর। হাতিটির পিঠে আঘাত ছিল। সেটি লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। জঙ্গলে ফিরছিল না। ডিসেম্বরে ঘুমপাড়ানি ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও হাতিটি অত্যন্ত দুর্বল ছিল এবং খুব ধীরে ধীরে চলাচল করছিল।
পুলিশ জানিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হল রেমন্ড মাল্লান ম্যালকম (২৮) এবং প্রসাদ শুগুমারান(৩৬)। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। আরও একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য ম্যালকমরা একটি রিসর্ট চালায় ওই এলাকায়। হাতিটি সেই রিসর্টের কাছাকাছি চলে যাওয়াতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ হাতির হামলা থেকে বাঁচতে তাঁরা বারংবার বনদপ্তরকে ফোন করে গেছে কিন্তু হাতি তাড়ানোর জন্য বনকর্মীরা আসেইনি শেষ অবধি।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হাতিটির কানে গুরুতর আঘাত লক্ষ্য করেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ১৯ জানুয়ারি সকালে হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হয়। তারপর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পথে হাতিটির মৃত্যু হয়। সেটির ময়নাতদন্ত হয়ে গিযেছে। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে বন দফতর।
নীলগিরির জেলাশাসক জে ইনোসেন্ট দিব্যা বলেন, ‘এটি একটি হৃদয়-বিদারক এবং নৃশংস ঘটনা। এরকম ঘটনা রোখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ ধৃত দু’জন যে রিসর্ট চালাচ্ছিল, তাও ইতিমধ্যে সিল করে দিয়েছে বন দফতর। বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর অ্যানিম্যাল রাইটস রাইটস অ্যান্ড এডুকেশনের এস মুরলীধরন বলেন, ‘এটা অপরাধমূলক কাজ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে কঠোর শাস্তির বিধান নেই। কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনায় পদক্ষেপ করা উচিত আদালতের এবং আইনের বিধানের বাইরে গিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। যাতে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।’
সেই নৃশংস ঘটনার একটি ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, হাতিটিকে লক্ষ্য করে টায়ারে কেরোসিন মাখানো কাপড় জড়িয়ে একটি কাঠ ছোঁড়া হয়েছে। মাথায় তখনও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তারস্বরে চিৎকার করতে করতে হাতিটি দৌড়াতে থাকে। দৃশ্যতই প্রবল যন্ত্রণায় ছিল। গত ১৯ জানুয়ারি হাতিটির মৃত্যু হয়।
আহত অবস্থায় হাতিটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বেলান নামে একজন ৫৫বছর বয়সী বনকর্মী যিনি মদুমালাই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পে চোরা শিকারীদের হাত থেকে বন্যপ্রানীকে রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন। বেলান জানান, “আমরা এই হাতিটির নাম দিয়েছিলাম এস.আই বা সাব ইন্সপেক্টর কারন ওর চাল চলন ছিল কঠোর নিয়মে থাকা পুলিশের মতই। ও প্রায়ই আশেপাশের গ্রামে যেত, ঘুরত ফিরত কিন্তু কারোরই কোনোও ক্ষতি করেনি। পিঠে একটা ক্ষত হওয়ার পর চারজন বনকর্মী ওর দেখভাল করছিল এবং ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছিল। একদিন রাতে হঠাৎই এস.আই অবাক করে দিয়ে মাবানাহাল্লা গ্রামের দিকে চলে যায় খাবারের সন্ধানে। গ্রামের মানুষরা ওকে ভয়ঙ্কর প্রতিফল দেয় জ্বলন্ত টায়ার ছুঁড়ে। এরপরই ও প্রচুর রক্তপাত আর ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে ২টি ভেটেনার দল নিযুক্ত হয়ে ওকে ঘুমপাড়ানি গুলি দিয়ে নিস্তেজ করার জন্য। কুনকি হাতির সাহায্যে সেই কাজ করার পর ওকে চিকিৎসার জন্য আমরা ১কিলোমিটার দুরে থেপ্পাকাড়ু হাতি কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলাম চিকিৎসার জন্য কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয় তার।