নিউজ ডেস্ক: আর চারদিন পরেই ৭২ ঘন্টার জন্য চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে চলেছেন বাংলার নিত্যযাত্রীরা। হুঁশিয়ারিটা আগেই দেওয়া হয়েছিল। এবার পালা সেই হুঁশিয়ারি পূরণ করার। একযোগে বাস মালিকদের পাঁচটি সংগঠন ২৮, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি, টানা তিনদিন ধর্মঘটের ডাক দিল।
বাস ধর্মঘটে নামার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে চিঠি দিইয়েছে বাস মালিকদের ৫টি সংগঠন। সংগঠনের তরফে চিঠিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের কাছে তেলের দাম কমানোর আর্জি জানিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে জিএসটি চালু করারও দাবী জানানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় পেট্রোলের লিটার পৌঁছেছে ৮৬ টাকা ৬৩ পয়সায়। একদিনে লিটারে ডিজেল হয়েছে ৭৮ টাকা ৯৭ পয়সা। দেশের প্রায় সব পণ্য জিএসটির আওতাভুক্ত হলেও, পেট্রোপণ্য নয়। বাস মালিকদের মতে, পেট্রোল, ডিজেলে জিএসটি অন্তরভূক্ত হলে অনেকটাই দাম কমবে।
জ্বালানির উপর চাপানো কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল পরিমাণ উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে সাধারণ মানুষকে রেহাই দেওয়ার দাবী তুলেছে বিরোধীরা। আর এমন পরিস্থিতিতে ক্রমাগত বেড়ে চলা জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জেরে ধর্মঘটের পথ বেছে নিল রাজ্যের একাধিক বাসমালিক সংগঠন।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে, ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্যকে, এর প্রতিবাদে রাজ্যে পরিষেবা দিতে পারব না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের মে মাসে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতি লিটার পেট্রোল ও ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক ছিল যথাক্রমে ৯.২০ টাকা এবং ৩.৪৬ টাকা। গত সাড়ে ৬ বছরে সেই শুল্ক যথাক্রমে আরও ২৩.৭৮ টাকা ও ২৮.৩৭ টাকা বেড়েছে। মোদী সরকারের জমানায় পেট্রোলে কর বেড়েছে প্রায় ২৫০ শতাংশ এবং ডিজেলে প্রায় ৮০০ শতাংশ। এদিকে তেলের ওপর মোদী সরকারের শুল্ক কমানো নিয়ে কোনও সদুত্তর না দিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সাফাই, মহামারীর জন্য তেল-উত্পাদনকারী দেশগুলিতে উত্পাদন কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম চড়ছে। তার ফলেই বাড়ছে জ্বালানির দাম।
এছাড়াও, এই ধর্মঘটের আরও একটি কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সহ পুরো দেশ করোনার জেরে হওয়া লকডাউন পরবর্তী অবস্থাকে কাটিয়ে উঠে এখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে। নিত্যযাত্রীদের অপরিহার্য যানবাহনগুলো রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু এরপর থেকেই অসুবিধায় পড়েছে বেসরকারি বাস ও মিনিবাসগুলি। ন্যূনতম ভাড়া দ্বিগুণ না করলে আর পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেই দাবী বাস মালিকদের।
তবে ভাড়াবৃদ্ধির দাবীতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার আগেই কিছু কিছু রুটে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ৭ টাকার ভাড়া ১০ টাকা নিচ্ছে, ৮ টাকার ১২ টাকা নিচ্ছে।
আর বাস মালিকদের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে রাজনীতি দেখছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার কমিটি চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বাস করি ধর্মঘট হবে না, আমরা কথা বলছি, কয়েকজনের গ্যাস খুলে ফুলে গিয়ে সরকারের সংঘর্ষে যাবেন না। প্রতীকি ছবি