নিউজ ডেস্ক: নন্দীগ্রামের মাটিতে মমতা ব্যানার্জীকে অর্ধ লক্ষ ভোটে হারানোর শপথ নিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর এরই সঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ভরকেন্দ্র হয়ে গেল নন্দীগ্রামই। শুভেন্দু গড়ে মমতার হাইভোল্টেজ সভা আর মমতার গড়ে শুভেন্দুর নজরকাড়া পদযাত্রা দিয়েই সোমবার দিনটা শেষ হয়ে যাবে ভাবা হয়েছিল বটে কিন্তু বাকি ছিল আরও চমক। প্রথম চমক অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা কিন্তু দ্বিতীয় চমকটা কম কিসের? দিদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন বলে তৃনমূল যখন বেশ একটা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন তখুনি পাল্টা দিলেন শুভেন্দু। রাসবিহারীর সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দেগে শুভেন্দুর বাণী ‘‘নন্দীগ্রামে আধ-লাখ ভোটে মমতাকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’
আগে ঘন ঘন নন্দীগ্রামে যেতেন তৃনমূল নেত্রী কিন্তু বহুবছর সে পথ মাড়াননি তিনি। যাকে কিছুদিন আগেই কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ভোট আসলেই নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়ে! হয়ত সে কথা মাথায় রেখেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মূখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, নন্দীগ্রামের সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। তাই নিজের উত্থানস্থল থেকেই একুশের লড়াইয়ে দাঁড়াতে চান তিনি।
এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়তে চান শুনে কলকাতার হাজরার সভা থেকে তাকে বেনজির আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘তিনি ভোট এলে নন্দীগ্রামে যান। তারপরে আর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়ে না। ঠিক ৫ বছর পর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে। যদি জিজ্ঞাসা করি নন্দীগ্রামের জন্য কী করেছেন উত্তর দিতে পারবেন?’’
মমতাকে বিঁধে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘সিঙ্গুর থেকে শিল্প তাড়িয়ে রাজ্যের সর্বনাশ করেছে। কাল খেজুরির হেড়িয়ায় পাল্টা সভা করব। আজ ৭ জেলা থেকে ৩০ হাজার লোক এনেছিল। ওই সভায় দাঁড়িয়ে বড়-বড় কথা বলেছে। আপনাকে নন্দীগ্রামের মানুষ ক্ষমা করবে না। আপনি বলেছেন নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন। লিখে রাখুন, আধ-লাখ ভোটে মাননীয়াকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। জনগণকে ভয় পেয়েছে।’’
বলা বাহুল্য লড়াইটা জমে গেল নন্দীগ্রামের মাটিতে এবং কঠিন লড়াইয়ে পড়ে গেল তৃনমূল। একদিকে বিজেপির সঙ্গে বাংলা জুড়ে লড়াই। যে লড়াই কঠিন হবে জেনেই এদিন নন্দীগ্রামে মমতা আগাম বলে রেখেছেন যে তাঁকে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে প্রচারে তাই নন্দীগ্রামে বেশি সময় দিতে পারবেননা। কিন্তু তাঁকে হারানোর শপথ নিয়ে শুভেন্দু নিশ্চিত ভাবেই বেশি সময় দেবেন নন্দীগ্রামের রনে আর সেটা তাঁর পক্ষে সম্ভবও হবে কারন তাঁর ঘরের কাছে নন্দীগ্রাম, তাঁর চেনা নন্দীগ্রাম।
রাজনীতিকদের মতে তাই আবেগের বশে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলাটা বোধহয় ঠিক হ’লনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নন্দীগ্রাম না ওয়াটারলু হয়ে যায়! মমতা নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর ঘোষণায় উদীপ্ত এক তৃনমূল নেতা মঞ্চ থেকে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছেন, ‘বাপের ব্যাটা হলে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হয়ে দেখাক।’ শুভেন্দু প্রার্থী হবেন কিনা নিশ্চিত ভাবেই তিনি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু মমতা ব্যানার্জীকে অর্ধলক্ষ ভোটে হারানোর কথা বলে তিনি যে ‘বাপের ব্যাটা’ তাঁর প্রমান দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে দশ পনেরো বিশ নয়, পঞ্চাশ হাজার ভোটে হারানোর শপথ নিয়েছেন তিনি। কতটা আত্মপ্রত্যয় থাকলে এই শপথ নেওয়া যায়?