নিজস্ব সংবাদদাতা: লড়াইটা হয় বটে দক্ষিণ পাড়া আর বাজার পাড়ার মধ্যে কিন্তু এবার সেমি ফাইনালেই ছিটকে গেল দক্ষিণ পাড়া। ফলে ফাইনাল হল বাজার পাড়ারই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যেই। তাই বাজারপাড়ার এবার টেনশন ছিলনা, উইনার্স ট্রফি ঢুকবে তাদের ঘরেই। গত ৪০০বছরের ঐতিহ্য মেনেই বুলবুলি লড়াই। মোরগ লড়াইয়ের হিংস্রতা, রক্তপাত আর প্রাণঘাতী লড়াই থেকে বৈষ্ণব আশ্রিত শ্যামানন্দ প্রভুর সাধন ভিটে শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরকে মুক্ত করতেই শুরু হয়েছিল এই বুলবুল লড়াই। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে যখন সারা জঙ্গলমহল জুড়ে মোরগ লড়াইয়ের দাপাদাপি তখন ব্যতিক্রম এই বৈষ্ণব তীর্থ।
সেই প্রাচীন রীতি মেনেই গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জীউ মন্দিরের প্রাচীন রীতি মেনে বৃহস্পতিবার হল বুলবুলি পাখির লড়াই। প্রতি বছরের মতো এবছর মকর সংক্রান্তি দিন বেলা ১২ টা থেকে রাধাগোবিন্দ জীউ মন্দিরের পাশে শুরু হয় বুলবুলি লড়াই।লড়াইতে মোট ১০০ টি পাখি অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় গোপীবল্লভপুরের বাজার পাড়ার বাসিন্দা হাউসি রাহুল বাঘ এর বুলবুলি পাখি। রাহুল বাঘ এর পাখিটি এদিন মোট ১৪ টি বুলবুলি পাখিকে হারিয়ে প্রথম হয়েছে। অন্যদিকে ওই বাজার পাড়ার বাসিন্দা হাউসি স্বরুপ দাস এর বুলবুলি ১১ টি পাখিকে হারিয়ে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পাখির মালিকদের এখানে হাউসি বলা হয়।
গোপীবল্লভপুর মুলত বৈষ্ণবীয় ভাবাদর্শের অন্যতম পীঠস্থান। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে সর্বত্র রক্তপাত যুক্ত মোরগ লড়াই হলেও রক্তপাত বিহীন বুলবুলি পাখির লড়াই প্রায় ৪০০ বছর ধরে গোপীবল্লভপুরে হয়ে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা কল্যান বারিক বুলবুলি লড়াই বিষয়ে জানান,গোপীবল্লভপুরের দক্ষিণপাড়া এবং বাজার পাড়ার মধ্যে এই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।যে পাড়ার পাখি সবথেকে বেশি বুলবুলি হারায় সে বিজয়ী হয়।এই খেলার জন্য স্থানীয় উৎসাহী মানুষজন মকর সংক্রান্তির আগে বুলবুলি পাখি ধরে রাখেন। মকর সংক্রান্তি দিন সকাল থেকে পাখিকে খাবার না দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামানো হয়।
দুটি পাখিকে পাকা কলার লোভ দেখিয়ে লড়ানো হয়।লড়াই করতে করতে যার পাখি পালিয়ে যায় সে হেরে যায়।যে পাখিটি ময়দানে থাকে সে বিজয়ী হয়।এই বুলবুলি পাখির লড়াইতে কোন পাখি মারা যায় না।হয়না কোন রক্তপাত।এই বুলবুলি পাখির লড়াই গোপীবল্লভপুরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে, জানান কল্যান বারিক। তবে পরাজিত পাখির ঝুঁটি কেটে নেওয়া হয়।