নিজস্ব সংবাদদাতা: অনেকটা যেন সেই ‘দুলালের তাল মিছরি। কেউ বলে ছবি দেখে কিনতে তো কেউ বলে ছবি আর সই দুটোই দেখে কিনতে হবে। কোনও টার বয়স ১৪ বছর তো কোনও টার বয়স ১০ বছর। যদিও ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে সবটাই একাকার আর সবটাই ভোট কারন সালটা ভোটের। তাই নন্দীগ্রাম থেকে নেতাই চলল রাজনৈতিক স্ট্যান্ট বাজি যেখানে অংশ নিলেন তৃনমূলের তাবড় তাবড় নেতা থেকে শুরু করে সদ্য বিজেপি হয়ে ওঠা নেতা মায় তামাদি হয়ে যাওয়া নেতাও।
‘শহিদ’মঞ্চ বা ‘শহিদ’ আবেগ দখলে তাই ৭ই জানুয়ারি, ২০২১ এক অদ্ভুদ অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী রইলেন নন্দীগ্রাম আর নেতাইয়ের বাসিন্দারা আর সেই অভিজ্ঞতার নাম ভোট বাজি। যে ভোট বাজির কারনেই বৃহস্পতিবার এদিন নন্দীগ্রাম থেকে নেতাই, প্রতিবারের মত সিপিএম বিরোধী ঝাঁজ পেছনে চলে গিয়ে সামনে উঠে এল ‘আসল’ শহিদ দরদি প্রচারের লক্ষ্যে তৃনমূল আর বিজেপির মরিয়া প্রচেষ্টা। আর একে অপরকে ছোট প্রমান করার লড়াই।
বুধবার রাত ১২টা বাজার পরেই নন্দীগ্রামের সোনাচুড়ার শহিদবেদীর কাছে পৌঁছে গেছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রতিবারের মতই শহিদবেদিতে মাল্যদান করে জানিয়ে দেন, ‘আমি প্রতিবার আসি, এবারও এসেছি আবারও আসব। কিন্তু অনেকে আগেও আসেননি, পরেও আসবেনা, এবছর আসবে কারন এই বছর ভোট।’ বলাবাহুল্য যাকে বা যাদের উদ্দেশ্য করে বলা সেই তৃনমূল নেতা সুব্রত বক্সী আবার পৌঁছে গেছিলেন আরেক শহিদ বেদির কাছে। নন্দীগ্রামের সীতনাথ কলেজ ময়দানে তিনি আবার শুভেন্দুকে বিঁধে বলেছেন, ‘কেউ কেউ বলেন নন্দীগ্রামের লড়াই নাকি তিনি একাই লড়েছেন। যদি তাই হত তবে ১৫বছর আগে আপনার নাম উচ্চারিত হত।”
নন্দীগ্রামের পর শুভেন্দু সকাল সকাল পৌঁছে যান নেতাইয়ে। সেখানে শহিদবেদিতে মালা দেওয়ার পর শুভেন্দু বলেন, ওরা (তৃনমূল) শহিদ বা আহতদের কোনো খোঁজ নেয়নি। আমি এখানে শহিদ বেদি করেছি কিন্তু কোনও রাজনীতি করিনি। এখন ওরা ভোটের আগে রাজনীতি করতে আসছে।’ শুভেন্দু এদিন হঠাৎ করেই বলেন, ‘নেতাইয়ের ঘটনার পেছনে শুধু সিপিএমকে দোষ দিলে চলবেনা। এর সঙ্গে জনসাধারনের কমিটি যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? এরা আবার বলছে শুভেন্দু কে এলাকায় ঢুকতে দেবেনা? আমি কাউকে ভয় পাইনা। ”
বৃহস্পতিবার আবার শুভেন্দু মোকাবিলায় লালগড়ে হাজির হয়েছিলেন পার্থ চ্যাটার্জী এবং মদন মিত্র। পার্থ চ্যাটার্জী নেতাইয়ের শহিদবেদিতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে তা ‘পবিত্র’ করেন লালগড়ের তৃনমুল ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন জন সাধারণ কমিটির নেতা শ্যামল মাহাত। শুভেন্দু কে ‘গদ্দার’ এবং তাঁর উপস্থিতিতে নেতাই অপবিত্র হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শ্যামল। নেতাই থেকে ফিরে লালগড়ে সভা করেন পার্থ ও মদন। পার্থ যেমন শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেছেন, উনি জঙ্গল মহলের ৪টা আসন পাবেন বলছেন কিন্তু আমি বলছি উনি শূন্য পাবেন।’ অন্যদিকে তৃণমূলে প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া মদন মিত্র প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় এতজনের গায়ে গুলি লাগল কিন্তু ওনার গায়ে একটা গুলি লাগেনি কেন?’ অর্থাৎ শুভেন্দু যে আন্দোলনে গট-আপ খেলেছেন এটাই বলতে চেয়েছেন মদন মিত্র।
সিপিএম দাবি করে থাকে, নন্দীগ্রামে এবং জঙ্গলমহলে তৃনমূলের সঙ্গে মাওবাদীদের সঙ্গে আঁতাত ছিল এবং নেতাই বা নন্দীগ্রামে খুন খারাপির পেছনে এই জোট কাজ করেছিল। এদিন ফের এই একই দাবি করেছেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। চন্দ্রকোনা রোডে একটি মিছিলে অংশ নেওয়ার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ঘোষ জানান, ‘সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। বহু জায়গায় এই খুন খারাপি সিপিএমের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা।’
অরাজনৈতিক সভা হলেও নেতাইয়ে শুভেন্দু আসার আগে গোটা নেতাই জুড়ে তৃনমূলের পতাকা টাঙানো হয়। যদিও পার্থ চ্যাটার্জীরা নেতাইয়ে যাওয়ার আগে সেই পতাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। লালগড়ে পোষ্টার লাগিয়ে বলা হয়, গদ্দার শুভেন্দু লালগড় তথা নেতাই ছাড়ো। আবার নেতাইয়ের মঞ্চে বিজেপির নেতা কর্মীদের ‘জয় শ্রীরাম, বিজেপি জিন্দাবাদ ইত্যাদি শ্লোগান তোলা হয়। যার নিন্দা করেছেন নেতাইবাসী। নেতাইয়ের মাস্টারমশাই দ্বারকানাথ পান্ডা বলেন, শহীদ বেদীর ওপরে রাজনৈতিক রং না দিলেই ভালো হতো। এটা আমাদের কাছে খারাপ লেগেছে। দলীয় শ্লোগান শহীদ বেদিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।”